কবি- আব্দুল মুকিত মুখতার(লন্ডন):-
উন্নত বিশ্বের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে হলে সহজ এবং দ্রুততম যোগাযোগ ব্যবস্থা একমাত্র বিষায়ক। একইভাবে উন্নত জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলেও বাড়ী-ঘর’র রাস্তাঘাটের উন্নয়ণ অপরিহার্য। প্রত্যেকটি উন্নয়নশীল দেশ ও জাতির প্রথম স্বীকৃতি হলো তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা। যার যোগাযোগ ব্যবস্থা যত সহজ হবে সে-ই তত সহজে পৌঁছে যায় উন্নত বিশ্বের দ্বারপ্রান্তে।
এইতো মাত্র ক’বছর আগে, অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরও আমরা শুনেছি গণচীনের মানুষ না খেয়ে মরেছে হাজারে হাজারে বছরে বছরে। হঠাৎ একব্যক্তি দাঁড়িয়ে গেলো। তাঁর এক হাকে হাতুড়ি ও অন্য হাতে কাস্তে। অর্থাৎ দু’দফা কর্মসূচী নিয়ে শুরু করলো উন্নয়নমূলক কর্মতৎপরতা। এক নম্বর- দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ণ। দ্বিতীয়ত- কাজের বিনিময়ে দেশপ্রেম কর্মসূচী। ব্যস! মাত্র কুড়ি বছরের মাথায় এই দেশ এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও উন্নয়ণশীল। নেতৃত্ব দিতে চায় সমস্ত পৃথিবীকে।
প্রমাণস্বরূপ, ঐতিহাসিক ‘কারাকোরাম’ মহাসড়ক হচ্ছে বিশ্বের সবচে দুর্গম রাস্তার মধ্যে অন্যতম। চীন ও পাকিস্তানের এটি সংযোগ সড়ক। ১৩০০ কিলোমিটার এই মহাসড়ক তৈরী হয়েছে পৃথিবীর সবচে দুর্গম পাহাড়ী এলাকায়। আর সে সকল রাস্তা তৈরী হয়েছে সেই সময়, যখন চীন পৃথিবীর দরিদ্র দেশের অন্যতম ছিল। চীনের কমিউনিষ্ট নেতা মাও জেদংয়ের উন্নয়নমূলক দূরদর্শিতার ফলেই চীন আজ বিশ্বের সবচে ধনী রাষ্ট্র।
একই অবস্থা আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও। প্রতি বছর মানুষ মরতো খাদ্য না পেয়ে অভাবের তাড়নায়। দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সরকারও পৌঁছুতে পারতো না সাহায্য নিয়ে। অথচ গত ৯ জুনের এক খবরে পড়লাম ভারতের সড়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীবৃন্দ ৭৫ কিলোমিটার বিশ্বমানের হাইওয়ে রাস্তা তৈরী করেছেন মাত্র ৫ দিনে। একাজের জন্য তারা বর্তমান বিশ্বে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
তুলনা নয়! প্রসঙ্গক্রমে বলতে চাই, সেদিন অর্থাৎ গত ২৮ জুন পূর্ব লন্ডনের স্থানীয় একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন এমপি। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, সরকারের কাছে এখন টাকার অভাব নেই। উন্নয়নমূলক যেকোন কাজ করতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর।
এটা আশার কথা। সুখকর সংবাদ। কিন্তু বাস্তবায়নটা বড়ই কঠিন এবং স্বপ্নময়। যে জাতির অস্তিমজ্জায় ব্যক্তিস্বার্থ পরিব্যাপ্ত, বিশ্বাসঘাতকতা বংশপরম্পরায় বিদ্যমান, সে জাতির দেশে এরকম একটি স্বপ্ন বাস্তবায়নের কল্পনাও স্বপ্নের মতো। তবে আশার কথা এই যে, আমাদের বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষিত সমাজ অনেকাংশে স্বদেশ প্রেমিক। তারা চাইলে অনেককিছুই করতে পারেন এবং পারবেন।
সেদিন সন্ধ্যায় আমার মোবাইলে একটা ফোন কল এসেছিল। তাৎক্ষণিক ফোনের কাছে ছিলাম না বলে ধরতে পারি নি। সময়মতো মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি ফোন কলটা এসেছে অনুজপ্রতিম সাবেক কাউন্সিলার দরছ উল্লার মোবাইল থেকে। সাধারণতঃ কোন জরুরী বিষয়-আশয় ছাড়া তার সাথে আমার কথা হয় না। সাথে সাথে ফোনব্যাক করলাম। ওদিক থেকে তিনি বললেন, ভুল করে নাম্বার ডায়েল হয়েছে। যাই হোক, কুশল বিনিময়ের পর তিনি বললেন, ‘আপনি লিখুন। অবহেলিত জগন্নাথপুর সম্পর্কে বেশী বেশী লিখার প্রয়োজন রয়েছে।
তার মুখ থেকে এই কথা ক’টি শোনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ি। সাত সমুদ্র তের নদীর পারে বসে অবহেলিত জগন্নাথপুরের উন্নয়ণের চিন্তায় সময় ব্যয় করা মহানুভবতার কাজ। আসলেও আমাদের এই তরুণ সমাজ দেশ ও জাতির জন্য কিছু করতে পারবে এতে সন্দেহ নাই। প্রয়োজন শুধু উৎসাহ, সমর্থন ও অভিভাবকতূল্য গাইডেন্স।
অবশ্য এই অভাবও পুরণ করার জন্য পরিপূর্ণ ক্ষমতাবান অভিভাবক আমাদের রয়েছেন। যিনি বাংলাদেশের স্বনামধন্য মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী জনাব এম এ মান্নান এমপি। তারা চাইলে অবহেলিত জগন্নাথপুরের উন্নয়ণে এগিয়ে আসতে পারেন।
অতএব অনুজপ্রতিম দরছ উল্লাহর সুরে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, অবহেলিত জগন্নাথপুরের সুদূর প্রসারী উন্নয়ণের মধ্যে থাকতে পারে-
১. জেলা শহর সুনামগঞ্জের সাথে উন্নতমানের হাইওয়ে যোগাযোগ।
২. বিভাগীয় শহর সিলেটের সাথে রেল যোগাযোগ।
৩. রাজধানী ঢাকার সাথে সরাসরি হাইওয়ে, রেলপথ ও জলপথের বিশ্বমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা।
৪. প্রবাসী জগন্নাথপুরবাসীকে স্বদেশে বিনিয়োগ করার পূর্ণ নিরাপত্তা। নিশ্চিত এসকল নিরাপত্তার আওতাভূক্ত থাকবে পারিবারিক, সামাজিক ও আইনী নিরাপত্তা।
আজকের নলজুর/০৩নভেম্বর২৩/ বিডিএন