জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধি:-
একাত্তরে মুক্তকালীন সময় ৬ নং সেক্টরের প্লাটুন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাদ হোসেন ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দাফন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন সাজ্জাদ হোসাইন।
সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩ টায় সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর পৌর এলাকাধীন ছিলিমপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তিনি অসংখ্যা গুনগ্রাহী ও আত্মীয়-স্বজন রেখে যান।
মঙ্গলবার বেলা ২ টায় ছিলিমপুর জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন ছিলিমপুর জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন মোহাম্মদ আতাউর রহমান। বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাদ হোসাইনের জানাজার পূর্বে জগন্নাথপুর থানা পুলিশের একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।
এরপর হাজী আব্দুল জব্বারের পরিচালনায় মরহুমের জীবনের নানা দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন- জগন্নাথপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ সভাপতি মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া, জগন্নাথপুর জামে মসজিদের ইমাম ও ইকড়ছই সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আজমল হোসাইন জামী প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হাজী ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া, সমাজসেকও সালিশী ব্যক্তিত্ব দিলাওর হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক কাউন্সিলর লুৎফুর রহমান, জগন্নাথপুর উপজেলা যুবলীগ সভাপতি কামাল উদ্দিন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী জমিল মিয়া, শফিকুর রহমান লিলু, হাজী শাহজাহান মিয়া, জগন্নাথপুর পৌর সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ছালিক আহমদ পীর, জগন্নাথপুর বাজার তদারক কমিটির সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক লিটন মিয়া, সাংবাদিক আমিনুল হক সিপন, ব্যবসায়ী মোঃ আজমল হোসেন প্রমুখ।
মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাদ হোসাইন ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে ২৬ বছর বয়সের ছাত্র নেতা সাজ্জাদ হোসাইন দেশ স্বাধীনের যুদ্ধে অংশ নিতে প্রশিক্ষণের জন্য চলে যান ভারতের বালাট ক্যাম্পে। সেসময় তিনি সিলেটে এমসি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।
৭১ সালে কয়েক মাস প্রশিক্ষণ নেয়ার পর মাতৃভূমি রক্ষায় দেশ স্বাধীনের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন । বাংলা, ইংরেজি, উর্দু ও হিন্দি সহ কয়েকটি ভাষায় পারদর্শী এবং সৎ সাহসী হওয়ায় কর্তৃপক্ষ সাজ্জাদ হোসাইনকে কোম্পানী কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব দেন। প্রতিটি প্লাটুনে ৩৬ জন করে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
২০০৩ সালে জগন্নাথপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও ২০০৫ সালে সুনামগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাজ্জাদ হোসাইন।
প্রসঙ্গত, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজ্জাদ হোসাইনের ব্যক্তিগত সংসার ছিলনা। যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পরবর্তী পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের কন্যাকে বিয়ে করেন। স্ত্রীর গর্ভে ১ পুত্র সন্তান ছিল। দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হলে সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী ঢাকায় চলে যান। কোনো এক সময় তাঁর একমাত্র সন্তান সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকায় ভাতিজা রোকন মিয়া দেখাশুনা করেন।
আজকের নলজুর/০৫মার্চ২৪/বিডিএন