মনজু বিজয় চৌধুরী, স্টাফ রিপোর্টার:-
শ্রীমঙ্গলে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার শংকর কুমার ধর এর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করছেন বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতি শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদস্যরা। এ নিয়ে শ্রীমঙ্গল সাব-রেজিস্টার অফিস বিরাজ করে উত্তেজনা।
কথা অনুযায়ী তাকে টাকা না দিলে বিভিন্ন আইনী ফাঁক-ফোকর আর অজুহাত দেখিয়ে দলিল করতে চান না। এছাড়াও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। নানা অজুহাতে তিনি সাধারণ মানুষকে দিনের পর দিন হয়রানি করেন। অন্যদিকে জমি নিবন্ধন করতে আসা দাতা-গ্রহীতারা চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।
দলিল লেখকদের অভিযোগ, শ্রীমঙ্গলে সম্প্রতি আসা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার শংকর কুমার ধর প্রতি দলিলের মূল্যের উপর ১% থেকে ৫% পর্যন্ত কমিশন না দিলে কোনো দলিল করতে চান না। তাছাড়া প্রতিটি দানপত্র দলিল, এওয়াজ দলিল, ওছিয়তনামা দলিল, বায়না দলিল, নাদাবি দলিল, বাটোয়ারা দলিল, হেবা দলিল থেকে ৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নিয়ে থাকেন। কথা অনুযায়ী তাকে টাকা না দিলে বিভিন্ন আইনী ফাঁক-ফোকর আর অজুহাত দেখিয়ে দলিল করতে চান না।
এছাড়াও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি গত দুই মাসে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। দলিল লেখকদের কেউ শংকর কুমার ধরের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করতে চাইলে তিনি তাদের সাথে দুর্ব্যবহার, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যসহ অসদাচরণ করেন। এর ফলে একদিকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শ্রীমঙ্গলে তিমির বণিক বলেন, আমি ১১ মার্চ জমির দলিল করে শ্রীমঙ্গল সাব রেজিস্টার অফিসে দলিল লেখক বদরুল হক এর মাধ্যমে এক লাখ দিয়ে আমার জমি রেজিস্টার করে।
আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন আমি দলিল করতে এসেছিলাম শ্রীমঙ্গল সাব রেজিস্টার অফিসে প্রথম একটি বাজেট দিয়েছেন আর তারা বিল্ডিং ৮ তলা বিল্ডিং এর উপর তলা রেজিস্ট্রি করতে ৬০ হাজার টাকা লাগবে,পরে অতিরিক্ত ১ লাখ ৪০ আমার কাছ থেকে চেয়েছেন। অফিসের যে অবস্থা রেজিস্টার স্যার কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম অতিরিক্ত টাকা সরকারের না আপনাদের তিনি তখন উত্তরে বলেন আমি এটা বলতে পারব না আপনাকে। আমরা এই টাকা কাকে দেব আপনারাই বলেন।
পারমিতা দেবনাথ নামের এক নারী বলেন, জমি বিক্রি করছি, কিন্তু দলিল না হওয়ায় টাকা পাচ্ছি না। আজকে অফিসে দলিল করতে এসে ঘুরে যাচ্ছি। আবার অনেকে দূরান্ত থেকে এসে দলিল না করেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
শ্রীমঙ্গল সাব রেজিস্টার অফিসে দলিল লেখক বদরুল হক বলেন আমার একজন ফ্রেন্ড বড় ভাই তিমিরের হঠাৎ করে আমাকে স্যার একটা ফিস চেয়েছেন জমি রেজিস্ট্রি করব প্রথম তিনি বলেন প্রথম ৭৩ হাজার টাকা লাগবে, লাস্টে বাধ্য হয়ে এক লাখ দিতে হয়। তখন স্যার কে বলেছিলাম পাঁচ হাজার টাকা কম দেব তিনি বলেন দলিল নিয়ে আসো আমি নষ্ট করে ফেলব । আমাদের সরকারি প্রয়োজন আমরা বিভিন্ন খাতে তিনি বলেন ভ্যাট উৎসগুলো দিতে হবে বলে তিনি জানান।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফজলুর রহমান জানান, শ্রীমঙ্গলে গত ২২ ফেব্রুয়ারি মাসে শংকর কুমার ধর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন সময়ে দলিল লেখকরা এর প্রতিবাদ করলেও কোনো সমাধান হয়নি। উল্টে তাদের সাথে অসদাচরণসহ নানা কারণ দেখিয়ে দলিল না করার হুমকি দিয়ে অনিয়মের মাত্রা বাড়িয়ে দেন তিনি।
উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ছায়েদ আলী বলেন, অতিরিক্ত টাকা ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করেন না। এমনকি উত্তরাধিকার দলিলেও অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন। নানা অজুহাতে তিনি সাধারণ মানুষকে দিনের পর দিন হয়রানি করেন। আমরা যারা দলিল লেখক রয়েছি তাদের মধ্যে অনেকেই বয়স ও পেশায় সিনিয়র ব্যক্তি রয়েছেন; তাদের সাথে অনেক খারাপ আচরণ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা রেজিস্টার এস এম সোহেল রানা মিলনের মুঠেফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাঁর মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের থেকে জানা যায় জেলা রেজিস্ট্রার ৩দিনের ছুটিতে আছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার শংকর কুমার ধর বলেন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে দলিলের রেজিস্ট্রি ফি বেশি হলে তো দিতেই হবে। সব দলিলের রেজিস্ট্রি ফি এক না। সরকারি বিধান অনুযায়ী সব টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়। আমার কাছে নগদ টাকা দেওয়ার কোনো বিধান নেই, সুযোগও নেই। আমি সরকারি ফি’র বাইরে কারো কাছ থেকে বাড়তি কোনো টাকা নেইনি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু তালেব জানান, দলিল লেখকদের বক্তব্য কি তারা আমাকে আগে লিখিতভাবে জানাক, যদি সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের কোনো অভিযোগ থাকে, তারা আমাকে লিখিতভাবে জানালে আমি তদন্ত করে অভিযোগের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেবো।
আজকের নলজুর/২১মার্চ২৪/বিডিএন