শাল্লা(সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ-
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নামে মাত্র কাজ করে প্রকল্পের সভাপতি ও সদস্য সচিবরা বরাদ্দ উত্তোলণ করে ভাগবাটোয়ারা করেছেন। আর এসব ভাগবাটোয়ারার সহযোগীতায় রয়েছেন দায়িত্বে থাকা প্রকল্প কর্মকর্তা মো. এনামুল হক। প্রকল্পের সভাপতি ও সদস্য সচিবদের দাবী বরাদ্দের একটি অংশের ভাগ প্রকল্প কর্মকর্তাকে দিয়ে কাজ শুরু করতে হয়। না হয় অন্যথায় বরাদ্দের বিল তুলতে হিমশিম খেতে হয়। শুধু তাই নয় অনেক জায়গায় পুরাতন কাজ দেখিয়ে নতুন বরাদ্দের বিলও উত্তোলণ করা হয়েছে। নিম্নমানের কাজ, মাটি ভরাট না করেই বিল উত্তোলন, সড়ক সংস্কার কাজের অনিয়ম ও দুনীতির ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সুত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার প্রথম পর্যায়ে টিআর ৭৬ টি প্রকল্পে প্রায় ৭৮ লাখ টাকা, কাবিটা ৩৪টি প্রকল্পে প্রায় ৮৫ লাখ টাকা ও কাবিখা ১৮টি প্রকল্পে ৪০টন চাল ও ৪০ টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে এমপির নির্বাচনী এলাকায় টিআর ৪৬টি প্রকল্পে ৪৫ লাখ টাকা, কাবিটা ১৭ টি প্রকল্পে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ও কাবিখা ৮ টি প্রকল্পে ২০টন চাল ও ২০ টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাহাড়া ইউনিয়নের বলদার কান্দা হতে কবীন্দ্র দাসের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত কাজে নামমাত্র কাজ করা হয়েছে। স্থানীয়রা বলেছেন এই প্রকল্পে বেশি হয়ে ৫০ হাজার টাকার মাটি ফেলা হয়েছে। অথচ এই প্রকল্পে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের সভাপতি স্থানীয় ইউপি সদস্য দেবব্রত দাস (মাতব্বর)। হবিবপুর ইউনিয়নের আছানপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের পশ্চিম পাশে রাস্তা পুন: নির্মাণ বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই প্রকল্পেও নাম মাত্র কাজ করা হয়েছে। স্থানীয় রমেশ দাস জানান এই প্রকল্পে ১০- ১৫ হাজার টাকার মাটির কাজ করেছেন মহিলা ইউপি সদস্য হরিদাসী সুত্রধর। একই ইউনিয়নের আনন্দপুরের দক্ষিণ হাটি স্কুল হতে কালভার্ট পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ লাখ টাকা। এই প্রকল্পে নামমাত্র কাজ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ মহিলা ইউপি সদস্য মনোয়ারা বেগম।
এদিকে আটগাঁও ইউনিয়নের গোবিন্দপুর কালীদাস রায়ের বাড়ি হতে মধু রায়ের বাড়ি পর্যন্ত একটি পুরাতন প্রকল্প দেখিয়ে নতুন করে ৫ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অথচ এই প্রকল্পে কোনো কাজ করা হয়নি। এ প্রতিবেদক ৩৬ টি প্রকল্প সরজমিন পরিদর্শন করেছেন। প্রত্যেকটি প্রকল্পে একই অবস্থা।
বাজারকান্দি গ্রামের ইউপি সদস্য রবীন্দ্র দাস বলেন, বিল উত্তোলণ করার পরপরই পিআইও এনামুল হককে লাখে ১৪ হাজার টাকা দিতে হয়। আমার দেড় লাখ টাকায় ২১ হাজার টাকা উৎকোচ দিতে হয়েছে পিআইওকে। আমাদের শতভাগ শতভাগ কাজ করার কোনো সুযোগ নাই।
তবে তৎকালীন দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, কিছু পেতে হলে দিতে হয় এটাই স্বাভাবিক। উৎকোচের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২৬ মার্চসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খরচ দিতে হয়। এছাড়াও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসলে খরচ করতে হয়। এগুলোতো আমার পকেট থেকে দিতে পারবো না। বর্তমানে এই কর্মকর্তা বদলী হয়ে দিনাজপুর আক্কেলপুর উপজেলায় কর্মরত আছেন।
বর্তমান অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন জানান, আমি নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। প্রকল্পের বিষয়ে অভিযোগ পেলে সরজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দিরাই শাল্লা আসনের সংসদ সদস্য ড. জয়াসেন গুপ্তা জানান, সরকারে বরাদ্দ দিয়েছে জনগনের উন্নয়নের জন্য। আর এই বরাদ্দে নয়ছয় করা হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি এলাকায় বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।
আজকের নলজুর/২৮এপ্রিল২৪/বিডিএন