মোঃ মুকিম উদ্দিন,জগন্নাথপুর প্রতিনিধি:-
জগন্নাথপুরের কুশিয়ারা নদীর চরে বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী হওয়ায় বাদাম চাষে ঝুঁকছেন এখানকার কৃষকেরা। সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায় বিপুলসংখ্যক মানুষ চিনাবাদাম চাষ করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে শুরু করেছেন।
জগন্নাথপুর কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ জানান, হরিনাকান্দি গ্রামের ১১০ জন কৃষক ২৫০ বিঘা অনাবাদি জমিতে চিনাবাদাম আবাদ করেছেন। তাদের সফলতার গল্প আশপাশ গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের অনুসরণ করে ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে রানীগঞ্জ ও পাইলগাঁও ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে এবার চিনাবাদাম চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগ বিভিন্ন সময় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে পাশে রয়েছে। রানীগঞ্জ ও পাইলগাঁও ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী মাটি বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। জগন্নাথপুর উপজেলায় এবার বাদাম চাষে ভাল ফলন হয়েছে। এতে করে বাদাম চাষের পাশাপশি অর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। কৃষকরা ন্যূনতম উৎপাদন খরচ এবং সহজ চাষ পদ্ধতির জন্য চিনাবাদাম চাষের ক্ষেত্রে আরো আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
হরিনাকান্দি গ্রামের যুবক মনিন্দ্র দাস বলেন, ২০২২ সালের বন্যায় পলি পরে চাতল হাওরে থাকা কিছু বোরো জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গ্রামবাসী ও কৃষককুল দুশ্চিন্তায় পড়েন। তার পর কৃষি বিভাগের সাথে পরামর্শ করে এসব জমিতে চিনাবাদাম চাষ শুরু করি। শুরুতে আমরা হাতে গুনা কয়েকজনে চিনাবাদাম চাষ করি। যখন চিনাবাদাম চাষে লাভের দেখা মিলেছে তখন পুরো গ্রামের প্রত্যেক পরিবারের লোকজন চিনাবাদাম চাষ করা শুরু করেন।
হরিনাকান্দি গ্রামের স্মাতক পাশ যুবক লিটন দাস পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া কৃষি জমিতে কৃষি কাজ শুরু করেন। লিটন দাস নিজে ২ কেদার জমিতে চিনাবাদাম চাষ করে ভাল ফলন পেয়েছেন। চিনাবাদামের দাম বিপুল চাহিদার সঙ্গে বাজারে উচ্চ মূল্যে কৃষকরা উৎসাহী হয়ে উঠছে। যার ফলে উল্লেখিত জগন্নাথপুর উপজেলার চিনাবাদাম চাষিরা আরও বেশি জমি চাষের আওতায় আনছেন।
রানীগঞ্জ ও পাইলগাঁও ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন বাদাম চাষির সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, আমরা চিনাবাদাম চাষ করছি তাতে আমরা ভালো ফলনের সাথে অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হয়েছি। এতে করে কৃষক আরো উদ্বুদ্ধ হয়ে বাদাম চাষে ঝুঁকছেন। বিস্তৃতি লাভ করছে বাদাম আবাদ। তারা আরও বলেন, চিনাবাদাম চাষ করায় এখন আমাদের গ্রামের নাম সবাই বলে বাদামের গ্রাম (বাদাম ভিলেজ)। অগ্রহায়ন পৌষ মাসে বাদাম চাষ করে বৈশাখ জৈষ্ঠ্যমাসে বাদাম বিক্রি করা যায়। পাইকারি দামে গ্রামে এসে বাদাম কিনে নিয়ে যায়।
বাদাম চাষী হীরা দাস বলেন, চিনাবাদাম চাষে কেদার প্রতি খরচ হয়েছে ছয় হাজার টাকা। প্রতি কেদারে বাদাম উৎপাদিত হয়েছে ৬ থেকে ৭ মন। কেদার প্রতি খরচ বাদে ২০ হাজার টাকা লাভের কথা জানান ওই চাষী।
রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছদরুল ইসলাম জানান, ইউনিয়নের হরিনাকান্দি গ্রামের লোকজন খুবই দরিদ্র। অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত কাটাচ্ছে তারা। এখন চিনাবাদাম চাষ করে আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে তারা। এসুযোগকে কাজে লাগাতে তাদের প্রতি কৃষি বিভাগকে আরও সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।
আজকের নলজুর/২৮মে২৪/বিডিএন