জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:-
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে এক কিশোরের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। নিহত কিশোর রিংকন বিশ্বাস(১৬)। উপজেলার চিলাউড়া- হলদিপুর ইউনিয়নের সমধল (নোয়াগাঁও) গ্রামের শ্রীকান্ত বিশ্বাসের পুত্র। সে দীর্ঘদিন ধরে সাবেক ইউপি সদস্য সমধল গ্রামের প্রভাবশালী লুলু মিয়ার ফিসারিতে গরু রাখালি করতো। কিন্তু গত শনিবার তার রহস্যজনক মৃত্যু হলে বিভিন্নভাবে চাউর হয় হার্ট অ্যাটাক, সাপে কেটে বা গাছ থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়। স্থানীয়দের সন্দেহের মধ্যে প্রশাসনকে না জানিয়ে গত শনিবার বিকেলে নিহত কিশোরকে মাটি চাপা দেওয়া হয়। রাতে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে এ ঘটনায় সন্দেহজনক ভাবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, বিষয়টি রহস্যজনক। তাই উপযুক্ত তদন্ত করে ও মরদেহটি তুলে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করা হোক।
নিহত কিশোরের পিতা শ্রীকান্ত বিশ্বাস জানান, আমার ছেলে রিংকন বিশ্বাস সাবেক ইউপি মেম্বার লুলু মিয়ার ফিসারিতে গরু রাখার কাজ করতো। সম্প্রতি বন্যার সময় আমরা চিলাউড়া-হলদিপুর ইউপি কার্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেই। তাই ছেলের সাথে আমাদের যোগাযোগ কম ছিল। কিন্তু গত শনিবার লুলু মিয়ার ভাগ্নে কামাল মিয়াসহ কয়েকজন লোক এসে আমাদের জানায় সমধল নদীর ওপারে গিয়ে ছেলেকে দেখার জন্য। তাদের কথায় আমরা গিয়ে দেখি ছেলেকে মৃত অবস্থায় একটি চৌকির মধ্যে শুইয়ে রাখা হয়েছে। এসময় তার কপালের নিচে ডানদিকে আঘাতের চিহ্ন ও মুখ দিয়ে গোবর বের হতে দেখা যায়। কিন্তু শরীরের কোথাও গোবর দেখা যায়নি। পুরো শরীরে তেল মালিশের চিহ্ন পাওয়া যায়। তার মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে, লুলু মিয়া ও তার স্বজনেরা জানায়, আম পাড়তে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে মারা গেছে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বার এসে আমাদেরকে বলেন, লাশ সৎকার করার জন্য। এসময় তারা জানান, প্রশাসনের বিষয়টি তারা দেখবেন। তাই তাদের পরামর্শে মৃত সন্তানকে মাটি চাপা দেই।
নিহত কিশোরের মামা লোকেশ বিশ্বাস জানান, স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার ভাগ্নের মৃত্যুর বিষয়টি আমাকে জানালে তাৎক্ষণিক ছুটে যাই। তিনি বলেন, লুলু মিয়া প্রথমে আমাকে জানান, আমার ভাগ্নে পানিতে পড়ে মারা গেছে। এসময় দেখতে পান কপালের ডানদিকে আঘাতের চিহ্ন, মুখ দিয়ে গোবর বের হচ্ছে। লাশটি সেখান থেকে কে বা কারা আনে বা তার শরীরে কে তেল মালিশ করে তা-ও আমরা জানতে পারিনি।
জানতে চাইলে লুলু মিয়ার ছোট ভাই জাকির হোসেন জানান, নিহত কিশোর রিংকন বিশ্বাস কয়েকমাস ধরে আমাদের ফিসারিতে গরু রাখার কাজ করতো। কিন্তু গত শনিবার আম পাড়তে গিয়ে সে গাছ থেকে গোবরের স্তুপে পড়ে মারা যায়। তাই আমরা তার পরিবারকে বিষয়টি জানাই।
৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার রুবেল মিয়া জানান, খবর পাওয়ার পর তিনটার দিকে যাই। তাদের অভিযোগ না থাকায় আমরা লাশ সৎকার করার জন্য বলি।
চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বকুল জানান, ঘটনার দিন অনুমান বিকেল তিনটায় নিহত কিশোরের মামা লুকেশ জানায়, আমার ভাগনা মারা গেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি খাটের ওপর লাশ। কারো প্রতি স্বজনদের সন্দেহ থাকলে থানায় জানানোর জন্য বলি। কিন্তু তাদের কোনো সন্দেহ না থাকায় আমাদের কাছে দাবি করে লাশটি নিয়ে যেতে।
সহকারী পুলিশ সুপার (জগন্নাথপুর সার্কেল) সুভাশীষ ধর বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের স্বজনদের সাথে কথা বলেছি। কারো প্রতি সন্দেহ থাকলে অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলেছি। অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
আজকের নলজুর/২৬জুন২৪/বিডিএন