আলাউর রহমান, সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:-
সুনামগঞ্জে বন্যার পানি যতই কমছে ততটাই দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। এদিকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনো দুর্ভোগ কমছে না মানুষের। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমান এতটাই বেশি যে ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাড়ানোর কথা ভাবতেই হিমশিম খাচ্ছে হাওরবাসী। প্রায় প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতে নিঃস্ব হয়ে পড়েন এ জেলার মানুষ। কেননা প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হিসাবে পরিচিত সুনামগঞ্জ জেলা। প্রায় প্রতিবছরই এ অঞ্চলের মানুষকে বন্যার কবলে পড়তে হয়।
২০২২ সালের প্রলয়ংকারী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসল, মৎস্য ও গবাদিপশুর। সেই ক্ষয়ক্ষতির রেশ না কাটতেই চলতি বছরে আবারো বন্যার কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন সুনামগঞ্জবাসী। বানের পানিতে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, তলিয়ে গেছে স্বপ্নের ফসলসহ প্রভৃতি। সবকিছু হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষ। কিভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠবেন সেই দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটছে ক্ষতিগ্রস্থদের। আয়-রোজগার ছাড়া শূন্য পকেটে পরিবারের খরচ চালাতেও হিমশিম খাচ্ছে তারা।
তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুরের বাসিন্দা মতিন মিয়া জানান, পাহাড়ি ঢলে আমাদের চলাচলের রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। স্ত্রী-সন্তানাদি নিয়ে থাকার জায়গা পাচ্ছি না। হাতে টাকা নাই, কিভাবে ঘর মেরামত করব। তাই ত্রীপাল দিয়ে রাস্তায় ছেলে মেয়ে নিয়ে দিন কাটাচ্ছি।
দোয়ারাবাজার উপজেলার কৃষক আব্দুল বাতেন জানান, আমি প্রায় ৩০০ হেক্টর আউশ ধান আবাদ করেছিলাম। বন্যার পানিতে তলিয়ে সব নষ্ট হয়ে গেছে। পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না। এভাবে আরো অনেক কৃষক তাদের ফসল হারিয়ে দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছেন।
সদর উপজেলার গোবিনপুর গ্রামের মৎস্যচাষী আব্দুল হাই জানান, আমার পুকুরে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার মাছ ছিলো। বানের পানিতে সব মাছ পুকুর থেকে চলে গেছে। সরকারী সহযোগিতা ছাড়া বেঁচে থাকার আর উপায় দেখছি না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে সুনামগঞ্জ জেলায় আউশ ধানের আবাদ হয়েছিলো প্রায় ৭ হাজার ৬১৪ হেক্টর। যার মধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ১৭ শত ২৭ হেক্টর। গ্রীষ্মকালীণ শাকসবজি আবাদ হয়েছিলো ৩ হাজার ৩৭৭ হেক্টর পানিতে তলিয়ে গেছে ৫৬৭ হেক্টর।
এদিকে জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ১২ উপজেলার ৮৩টি ইউনিয়নের প্রায় ৮ হাজার ২১ টি পুকুরের ছোট-বড় মাছ বানের পানিতে ভেসে গিয়ে আনুমানিক প্রায় ৭২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগের তথ্যমতে, বন্যায় সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগের আওতাধীন প্রায় ৮টি সড়কের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কোথাও কোথাও বন্যার পানির স্রোতের বা ঢেউয়ের আঘাতে সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন জায়গার ব্রীজ ও কালভার্টের এপ্রোচের বিভিন্ন অংশ ধ্বসে গেছে। বন্যায় রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ছক আঁকছে সড়ক বিভাগ।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: রেজাউল করিম জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করে মন্ত্রনালয়ে পাঠালে তাদের অনূকুলে যে বরাদ্দ আসবে সেখান থেকেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অনুযায়ী তাদের সহযোগিতা করা হবে।
আজকের নলজুর/৩০জুন২৪/বিডিএন