মোঃ মুকিম উদ্দিন জগন্নাথপুর প্রতিনিধি:-
স্মরণকালের বন্যার ভয়াবহ অবস্থা। বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, খাগড়াছড়ি ও বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ বহু এলাকা বন্যা কবলিত। লাখও নারীপুরুষ ও শিশু কিশোর এ মুহূর্তে পানিবন্ধি।
সকলের মুখে শুনা যাচ্ছে বাঁচার জন্য কান্নার হাহাকার। প্রাণে বেঁচে থাকার আকুতি। তারা বলছেন, আমাদেরকে আগে উদ্ধার করুন। খাদ্যের প্রয়োজন নেই। আগে আমাদেরকে বাঁচান। বাসা বাড়ি সব ডুবে একাকার। ঘরের টিনের চালেও আশ্রয় নিয়েছেন লোকজন। এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির শিকার তারা বিগত ত্রিশ চল্লিশ বছরেও এমন পরিস্থিতি হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা সচিত্র অবস্থা দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব ভাই বোনকে রক্ষা করুন। উদ্ধার কাজে আমাদেরকে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহনের তাওফিক দান করুন। যারা অংশগ্রহণ করেছেন তাদেরকেও উত্তম প্রতিদান দান করুন। গতকালও আমাদের এই ভাইয়েরা জানতেন না যে, আজকে তাদের কি অবস্থা হব? কি পরিনতির মুখোমুখি হতে হবে তাদেরকে? জানতেন না যে লড়তে হবে জীবন বাঁচার তাগিদে।
এ মুহুর্তে আমাদের জন্য পানিবন্ধি বন্যাগ্রস্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। এর চেয়ে মানব কল্যান আর কি হতে পারে? এজন্য জাতি ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে গণমানুষের কল্যানে আমাদেরকে এগিয়ে আসা উচিত এখনই। সব রকমের ভেদাভেদ ভুলে মানবতার কল্যানে কাজ করার কোন বিকল্প নেই। তাই আসুন, আমরা বন্যার্ত অসহায় মানুষের পাশে দাড়াই।
হাদিসের আলোকে কল্যান হচ্ছে, গোটা মুসলমানদের জন্য কল্যান কামনা করা। আজকে বন্যায় প্লাবিত আমার ভাই ও বোন। তাদের উদ্ধার কাজে সাহায্য সহযোগিতা করা। তাদের প্রতি প্রত্যেকের দয়ার হাত প্রসারিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্য ও কর্তব্য।
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্নিত, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা সে ব্যক্তির ওপর অনুগ্রহ করেন না। যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না। (সহি বুখারী)
এহাদিসের শিক্ষা হলো, মানুষের প্রতি দয়া অনুগ্রহ করা, পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলার দয়া অনুগ্রহ লাভের অন্যতম একটি মাধ্যম। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, বন্যা কবলিত অসহায় মানুষেরা আমাদের ভাই বোন। আমাদেরই দেহের একটা অংশ।
বিখ্যাত সাহাবী হযরত নুমান ইবনে বাশির (রা.) থেকে বর্নিত, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল মুমিন এক ব্যক্তির মতো যদি তার চক্ষু অসুস্থ হয় তখন তার সর্বাঙ্গ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর যদি তার মাথায় ব্যথা হয় তখন তার সমস্ত শরীরই ব্যথিত হয়। (সহি মুসলিম) কাজেই আমাদের এসব বন্যার্তদের সেবায় এগিয়ে আসা পড়ত্যেক মুসলমানের ঈমানি দায়িত্বও বটে।যা ইসলামের চিরন্তন একটি শিক্ষা। আমাদের উচিত তাদের পাশে সাধ্যমত সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বর্নিত, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে না। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজনে সাহায্য করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট দূর করবে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার বিপদ দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবে।
আল্লাহ তাআলা তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন।’ (সহি বুখারি ও মুসলিম) আজ যদি আমরা আমাদের এই মুসলমানদের প্রয়োজনে পাশে দাড়াই। অর্থ কড়ি সময় দিয়ে। কিংবা কোনো সুচিন্তিত বুদ্ধি পরামর্শ দেওয়ার মাধ্যমেও। তবে অবশ্যই আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কিয়ামতের দিন এর সঠিক নিয়ম ও প্রতিদান দান করবেন।
অবশ্যই এই ভালো কাজের বিনিময়ে হতে পারে জান্নাতের নেয়ামত লাভ করব। আল্লাহ তাআলা এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমাদেরকে তাদের পাশে দাঁড়াবার সৎসাহস ও তাওফিক দান করুন। যাতে আমাদের দ্বারা তাদের মঙ্গল হয়।
আজকের নলজুর/২৫আগস্ট২৪/বিডিএন