স্মৃতির আয়না-
মির্জা জুয়েল আমিন, লন্ডন থেকে:-
স্বপ্নটা নিয়ে দিলাম পারি আপনজন সবাই ছাড়ি। সে অনেক বছর হল দেশ ছেড়েছি কিন্তু কিছু আপনজনকে এখনো বুলতে পারিনি। সেই ছোটবেলা থেকে যাদের স্নেহ মায়া মমতা শাসনে বড় হয়েছি। চলাফেরার সামান্য এদিক সেদিক হলেই বড় ভাইয়ের মতো শাসন করতেন। সাদা মনের মানুষ সৎ নির্বিককর্মট একজন ব্যক্তি কথা বলতে হাসেন যার কাছে সব সময় সব পরামর্শ পেয়েছি। আমাদের বাড়ির সামনে উনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সেই সময়কার সবচেয়ে জনপ্রিয় নন্দিতা ফটো স্টুডিও আমার এক প্রিয় বড় ভাই হীরা মোহন দেব।
যাকে আমি হিরা দাদা বলে ডাকতাম। হিরা দাদা সমীর দাদা উনাদের সাথে পারিবারিকভাবে সম্পর্ক। সেই ছোটবেলা থেকে আদর স্নেহ মমতা পেয়ে বড় হয়েছি। মাঝে মাঝে মনে হতো আমার আরেক বড় ভাই। যেকোনো সমস্যা বা টাকা-পয়সার প্রয়োজন হলে চাওয়া মাত্র হাতে পেয়ে যেতাম। তৎকালীন সময়ে নন্দিতা স্টুডিওর অবদান অপরিসীম। ছবি তুলা বিয়ে-শাদী যেকোনো অনুষ্ঠান নন্দিতা স্টুডিও ছাড়া হতো না। বাজারের পাশে বাড়ি হওয়ায় রাজনীতি সামাজিক কর্মকান্ড এবং ইলেকশনের সময় জগন্নাথপুর বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছি।
এসব গুণী মানুষদের ঋণ শোধ করার মত নয়। তৎকালীন ব্যবসায়ীদের মধ্যে কুতুব উদ্দিন চৌধুরী চাচা, বিনু বনিক কাকা, বাবুল দেব কাকা, হাজী ফিরোজ মিয়া দাদা, হাজী আব্দুল মতলিব, তাহির আলী মহাজন, হাজী তসলিম উদ্দিন, পংকু দাদা, প্রণব দাদা, নৃপেন্দ্র দাদা, খানু দাদা, পঙ্কিমিয়া মহাজন, আব্দুল হক মহাজন, কাউন্সিলর কামালের আব্বা, প্রয়াত সাংবাদিক সংকর স্যারের আব্বা, সাংবাদিক সুনু ভাইয়ের আব্বা, জামাল উদ্দিন মহাজন, লুৎফুর রহমান,মুজিবুর রহমান, সুমন গার্মেন্টস, লুৎফুর রহমান চৌধুরী, আক্তার হোসেন হোটেল প্যারিস, গোপাল দাদা, পজ্জু দাদা, সুদীপ দাদা, খালী দাদা, বাচ্চু দাদা, আব্দুল তাহিদ মামা, গনি ভূঁইয়া, কুদ্দুস ভূইয়া, ডাক্তার সুধীর চন্দ্র গুপ কাকা, ডাক্তার আহমদ আলী, মির্জা রফিকুল বারী, মির্জা ফারুক আহমদ ইয়াওর, মির্জা শাহীন মিয়া, মজজবিল আলী, আব্দুর রহমান ট্রেইলার, আব্দুসুবহান টেইলার, ডাক্তার হোসেন, ডাক্তার আব্দুল হাসিম, বিজন দেব, প্রদীপ দাদা, উত্তম দাদা, লালা মিয়া, মিন্টু বাবু ,দোলন বাবু ,জুবায়ের আহমদ হামজা, জাহাঙ্গীর হোসেন, হুমায়ুন কবির, মির্জা দুলন, রানা বাবু, আব্দুল মুসাব্বির। কনাই মিয়া ,মহাজন ধনঞ্জয় বনিক ,ফেরদৌস মিয়া।
এইসব গুণী মানুষদের কাছে আমি রক্ত ঋণে আবদ্ধ। ২৭ বছর আগের কথা অনেকের নাম মনে করতে পারছি না। এজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। মানুষের কর্মের ছাপ রেখে যান বিদায় ২৭ বছর পরেও উনাদের কথা আমার অন্তরে গাতা রয়েছে। আমি যখন দেশে যাই হীরা দাদার সাথে উনার দোকানে বসে অনেকক্ষণ গল্প গুজব করি। আমার মত অনেকেরই নন্দিতা স্টুডিও হীরাদা সমীর দাদার সঙ্গে অনেক স্মৃতি মাখা দিন মনে রাখবেন।
মানুষের জীবনের বড় সম্পদ তার ব্যবহার। কর্মদক্ষতা সততা ব্যবহার দিয়ে অনেক কিছু জয় করা সম্ভব। অনেক ব্যবসায়ী এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছেন। উনাদের ব্যবহার আমাদেরকে এখনো উনাদের কথা মনে করিয়ে দেয়। এখন জগন্নাথপুর বাজার অনেক প্রসার লাভ করেছে। চেনাজানা পুরনো কিছু ব্যবসায়ী এখনো সফলতার সাথে ব্যবসা করে যাচ্ছেন।
দেশে গেলে যথাসাধ্য ওনাদের সাথে বসার গল্প করার চেষ্টা করি। ঘরি বাবুর গল্পটা না হয় নাই বললাম। গয়না নৌকা দিয়ে ভবের বাজার কেউনবাড়ী অথবা শাসন নবী না হয় নাই গেলাম। নলজুর নদীতে করুণাদার খেয়া নৌকায় না হয় নাই উঠলাম।
সবাই মিলে চাঁদা তুলে ডাকবাংলা ব্রিজ না হয় নাই বানালাম। রবি এবং বুধবারের খানু ভাইয়ের টিনের বাড়ির ঘোষণা নাই শুনলাম। এরকম অনেক স্মৃতি হৃদয়ের মনি কোটায় দাগ কাটে। এই সমস্ত গুণীজনদের নাম উল্লেখ করতে পারায় নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আমি সবার সুস্বাস্থ্য মঙ্গল কামনা করছি।
সহ-সম্পাদক: মির্জা জুয়েল আমিন, আজকের নলজুর পত্রিকা।
আজকের নলজুর/২২আগস্ট২৪/বিডিএন