সালেহ আহমদ (স'লিপক):-
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে নগদ মজুরী ৫০০ টাকা নির্ধারণ সহ ৩ দফা দাবীতে চা শ্রমিক আন্দোলনে ক্রীয়াশীল সংগঠনসমূহের সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের চৌমুহনা চত্ত্বরে চা শ্রমিক আন্দোলনে ক্রীয়াশীল সংগঠনসমূহের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বিপ্লব মাদ্রাজী পার্শীর সভাপতিত্বে নিম্নতম মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন করে নগদ মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা, অবিলম্বে বন্ধ বাগানসমূহ চালু করে দূর্গাপূজার আগেই সকল বকেয়া ও বোনাস পরিশোধ করা এবং চা শ্রমিক ইউনিয়নের মেয়াদোতীর্ণ নেতৃত্বকে অবিলম্বে অপসারণ করে নির্বাচন দেওয়ার দাবী তুলেন চা শ্রমিকরা। এছাড়া আগামী বুধবার মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শ্রম উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হবে বলে সমাবেশে জানানো হয়।
ছাত্রনেতা ও চা শ্রমিক সন্তান মিখা পিরেগু এর সঞ্চালনায় সমাবেশে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট আবুল হাসান, ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কিরণ শুক্লবৈদ্য, বাংলাদেশ চা শ্রমিকের দশ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক সবুজ তাঁতী, ছাত্রনেতা ও চা শ্রমিকের দশ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির কেন্দ্রীয় সংগঠক মনিষা ওয়াহিদ, সিপিবি’র সভাপতি প্রভাষক জলি পাল, সিপিবি’র সাবেক সভাপতি মো. মোসাদ্দেক বেলা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট মৌলভীবাজার শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব সূত্রধর, করিমপুর চা বাগানের ইউপি সদস্য কাজল রায়, মদনমোহনপুর চা বাগানের মথুর চন্দ্র চাষা, মাথিউরা চা বাগানের ময়না রাজভর, কালিটি চা বাগানের কৃষ্ণ দাস অলমিক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, বিগত ১০ আগষ্ট ২০২৩ইং তারিখে চা শ্রমিকদের দৈনিক নগদ মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে একটি গেজেট প্রকাশ করা হয়। উক্ত গেজেটের তফসিল (ঙ) এর ৭নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গেজেট প্রকাশের এক বছর পর থেকে প্রতিবছর ৫% হারে মজুরি বৃদ্ধির বিধান রয়েছে। সে মোতাবেক চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং তারিখ মূলমজুরি ১৭০ টাকার ৫% হারে মাত্র ৮.৫০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে সার্কুলার জারি করে। মূলত এর পর থেকেই চা শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের এর সঞ্চার হয়। আজকের কর্মসূচি থেকে চা শ্রমিকরা মালিকপক্ষ ও বিগত সরকারের যোগসাজশে একতরফা অগণতান্ত্রিকভাবে ঘোষিত গেজেট প্রত্যাখ্যান করেন। একই সাথে মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন করে বর্তমান বাজারদরের সাথে সঙ্গতি রেখে চা শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণের দাবী জানানো হয়।
বক্তারা আরও বলেন, ন্যাশনাল টি কোম্পানির ১২টি চা বাগান, দেওন্দি টি কোম্পানির ৪টি চা বাগান, মাথিউরা, মুমিনছড়া, ফুলতলা, কালাগুল প্রভৃতি চা বাগানগুলো মালিপক্ষের দূর্নীতি অবহেলায় অব্যবস্থাপনা শিকার হয়ে ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়েছে। উক্ত বাগানগুলোর শ্রমিকরা দীর্ঘদিন যাবত মজুরি বঞ্চিত হয়েও চা বাগানের উৎপাদন কার্যক্রম চালু রেখেছেন। শ্রমিকদের বৃহত্তর উৎসব দূর্গাপূজার আগেই বকেয়া মজুরি ও বোনাস পাওয়ার অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ১৬৭টি চা বাগান, ৭টি ভ্যালি, ১ লাখের উপর স্থায়ী শ্রমিক, ৫০ হাজারের বেশি অস্থায়ী শ্রমিক আর ১০ লাখের বেশি চা জনগোষ্ঠীর মানুষ নিয়ে চা শিল্প৷ পাতা তোলার সুবিধার জন্য চা গাছকে ছেঁটে যেমন ২৬ বা ২৮ ইঞ্চি করে রাখা হয়, তেমনি চাষ শ্রমিকদের জীবনের স্বপ্নকেও বড় হতে দেয়া হয় না বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা। চা শিল্পের বয়স প্রায় ২০০ বছর হলেও চা শ্রমিকদের নগদ মজুরি এখনো ১৭০ টাকা। এই অন্যায্য মজুরির মাধ্যমে বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বাজারদরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এমতাবস্থায় আন্দোলনে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন সংগঠন চা শ্রমিকদের শত বছরের বৈষম্য বঞ্চনার নিরসন ঘটিয়ে মানবিক জীবন প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবী জানান।
আজকের নলজুর/২৯সেপ্টেস্বর২৪/বিডিএন
সম্পাদকঃ জুবায়ের আহমদ হামজা, বার্তা সম্পাদকঃ বিপ্লব দেবনাথ। অফিস: ব্যারিস্টার মির্জা আব্দুল মতিন মার্কেটে, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।
Email:- ajkernaljur@gmail.com Mob:- 01880597469