1. admin@ajkernaljur.com : admin :
মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যবাহী চুঙ্গাপিঠার উপকরণ ঢলুবাঁশ বিলুপ্তির পথে - আজকের নলজুর
২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ১৩ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ| বর্ষাকাল| শুক্রবার| ভোর ৫:৩১|

মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যবাহী চুঙ্গাপিঠার উপকরণ ঢলুবাঁশ বিলুপ্তির পথে

রিপোর্টার
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫,
  • 69 দেখা হয়েছে

সালেহ আহমদ (স’লিপক):-

বৃহত্তর সিলেট তথা মৌলভীবাজারের প্রাচীন ঐতিহ্য পিঠেপুলির অন্যতম চুঙ্গাপুড়া পিঠা প্রায় বিলুপ্তির পথে। আগের মতো এখন আর গ্রামীণ জনপদের বাড়িতে বাড়িতে চুঙ্গাপুড়ার আয়োজন চোখে পড়ে না। শীতের রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে সারারাত চুঙ্গাপুড়ার দৃশ্যও তাই দেখা যায় না।

শীত মৌসুমে গ্রামের বাজারগুলোতে বসতো মাছের মেলা। সেই মেলা থেকে মাছ কিনে কিংবা হাওর-নদী হতে বড় বড় রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, পাবদা, কই, মাগুর মাছ ধরে নিয়ে এসে হাল্কা মসলা দিয়ে ভেজে (আঞ্চলিক ভাষায় মাছ বিরান) দিয়ে অথবা খেজুরের রস হাঁড়িতে চুলায় বসিয়ে ঘন করে (আঞ্চলিক ভাষায় লালী বানিয়ে) তা দিয়ে চুঙ্গাপুড়া পিঠা খাওয়া ছিলো মৌলভীবাজার তথা সিলেট অঞ্চলের একটি অন্যতম ঐতিহ্য। বাড়িতে মেহমান বা নতুন জামাইকে শেষ পাতে চুঙ্গাপুড়া পিঠা মাছ বিরান আর নারিকেলের পিঠা বা লালী পরিবেশন না করলে যেনো লজ্জায় মাথা কাটা যেতো।

বর্তমানে সেই দিন আর নেই। চুঙ্গাপিঠা তৈরির প্রধান উপকরণ ঢলুবাঁশ ও বিন্নি ধানের চাল (আঞ্চলিক ভাষায় বিরইন চাউল) সরবরাহ এখন অনেক কমে গেছে। অনেক স্থানে এখন আর আগের মতো চাষাবাদও হয় না।

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার পাথারিয়া পাহাড়, জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা, রাজনগর উপজেলা এবং মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বিভিন্ন বাগান সহ চা-বাগানের টিলায়, কুলাউড়ার গাজীপুরের পাহাড় ও জুড়ী উপজেলার চুঙ্গাবাড়ীতে প্রচুর ঢলুবাঁশ পাওয়া যেতো। তন্মধ্যে চুঙ্গাবাড়ী এক সময় প্রসিদ্ধ ছিলো ঢলুবাঁশের জন্যে। অনেক আগেই বনদস্যু, ভুমিদস্যু এবং পাহাড়খেকোদের কারণে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায় হাঁরিয়ে গেছে ঢলুবাঁশ। তবে জেলার কিছু কিছু টিলায় এখনও ঢলুবাঁশ পাওয়া যায়।

পাহাড়ে বাঁশ নাই বলে বাজারে ঢলুবাঁশের দামও এখন তাই বেশ চড়া। ব্যবসায়ীরা দুরবর্তী এলাকা থেকে ঢলুবাঁশ ক্রয় করে নিয়ে যান নিজ নিজ উপজেলার বাজার সমুহে বিক্রির আশায়। আলাপকালে অনেকেই আক্ষেপ করে জানান, এ বাঁশটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।

ঢলুবাঁশ ছাড়া চুঙ্গাপিঠা তৈরি করা যায় না। কারণ ঢলুবাঁশে এক ধরনের তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা আগুনে বাঁশের চুঙ্গাকে না পোড়াতে সাহায্য করে। ঢলুবাঁশে অত্যধিক রস থাকায় আগুনে না পুড়ে ভিতরের পিঠা আগুনের তাপে সিদ্ধ হয়। ঢলুবাঁশের চুঙ্গা দিয়ে ভিন্ন স্বাদের পিঠা তৈরি করা হয়ে থাকে। কোনো কোনো জায়গায় চুঙ্গার ভেতরে বিন্নি চাল, দুধ, চিনি, নারিকেল ও চালের গুড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করা হয়। পিঠা তৈরি হয়ে গেলে মোমবাতির মতো চুঙ্গা থেকে পিঠা আলাদা হয়ে যায়। চুঙ্গাপিঠা পোড়াতে আবার প্রচুর পরিমানে ধানের খড় (নেরা) দরকার পড়ে। খড়ও এখন সময়ের প্রয়োজনে দাম একটু বেশি।

একটা সময় ছিলো শীত মৌসুমে গ্রামীণ জনপদে প্রায়ই বাজারে মাছের মেলা বসত। বিশেষ করে সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব পৌষ সংক্রান্তির সময় এ বাঁশগুলো কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ, মুন্সীবাজার সহ বিভিন্ন হাটবাজারে দেখা যেত। কমলগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ী এলাকায় প্রচুর ঢলুবাঁশের চাষ হতো।

পিঠা তৈরী করার জন্য সদর উপজেলার হযরত সৈয়দ শাহ্ মোস্তফা (রহ.) মেলায় ঢলুবাঁশ কিনতে আসা মাসুদ মিয়া বলেন, চুঙ্গাপিঠার বাঁশ কেনার জন্য এসেছি। আমাদের পূর্বপুরুষরা এ পিঠা বানিয়ে খেতেন। ২ আটি বাঁশ ৬০০ টাকা দাম চাচ্ছেন। আমি ৫০০ টাকা বলেছি। আমরা প্রতিবছর এখান থেকে বাঁশ নিয়ে পিঠা বানিয়ে খাই।

ক্রেতা জিয়াউর রহমান বলেন, চুঙ্গাপিঠা খাওয়ার জন্য বাঁশ কিনতে এসেছি। আগের মুরুব্বিরা চুঙ্গাপিঠা খেতেন শুনেছি। আমরা কখনো খাইনি, এবার খেয়ে দেখব কেমন মজা হয় চুঙ্গাপিঠা।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুরের বাঁশ বিক্রেতা হাসিম মিয়া বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রয় করে এনে ৫/৬ টাকা দামে পিস হিসেবে বিক্রি করি। আস্তাবাঁশ প্রতি পিস ৮০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি করি। এখন বাঁশ পাওয়া যায় না। তবে দেওড়াছড়া, প্রেমনগর এবং গিয়াসনগর বাগানে কিছু কিছু বাঁশ পাওয়া যায়। পাঁচশো বাঁশ এনেছিলাম। প্রায় চার হাজার টাকা বিক্রি করেছি।

কালাপুর থেকে আসা আরেক বাঁশ বিক্রেতা মুজাহিদ মিয়া বলেন, আমি বিগত কয়েক বছর ধরে এখানে এসে বাঁশ বিক্রি করি। দিনে দিনে এই ব্যবসা কমতে আছে। এখনকার লোকেরা আগেকার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছে না। শহরের লোকেরা এসব খেতে অভ্যস্ত নয়। এখনও গ্রামের মানুষরাই এ বাঁশ কিনে নিয়ে যায়।

আজকের নলজুর/আরএন/১৬-০১-২৫ইং

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরো খবর
© All rights reserved © 2023 আজকের নলজুর
Design and developed By: Syl Service BD