মোঃ মুকিম উদ্দিন জগন্নাথপুর প্রতিনিধি:-
আজ ১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবস। পবিত্র মাহে রমজান একটি মহিমান্বিত মাস এবং ১৭ রমজান ইতিহাসের একটি তাৎপর্যময় দিন। প্রতি বছর ঘুরে এ মাসটি অত্যন্ত মর্যাদার সাথে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। এ মাসে মুসলিম এবং কাফিরদের মধ্যে ঘটে যাওয়া একটি ঐতিহাসিক যুদ্ধ বিষয়ক ঘটনার তাৎপর্য বিশ্বের মুসলমানদের দ্বীন কায়েমের সংগ্রামে নতুনভাবে উজ্জীবিত করে। রমজানের মহিমান্বিত ১৭তম দিনে ঐতিহাসিক বদর নামক প্রান্তরে যুদ্ধটি সংঘঠিত হওয়ার কারণে এর নাম দেয়া হয় জঙ্গে বদর বা ‘বদর যুদ্ধ’। এ যুদ্ধ কাফেরদের সাথে মুসলমানদের প্রথম যুদ্ধ। প্রতি বছর এ দিনটি আমাদের মাঝে আসে ঈমানী চেতনা জাগ্রত, ইসলামের সুমহান আদর্শের বিপ্লবী দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছানো এবং দ্বীন কায়েমের বার্তা নিয়ে। এ দিনটি আসে মুসলিম উম্মাহকে বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে জিহাদে অংশ গ্রহণে উজ্জীবিত করতে।
বদর যুদ্ধ ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ মার্চ মদিনা থেকে ৮০ মাইল দূরে বদর নামক প্রান্তরে সংঘঠিত হয়। ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য বদর যুদ্ধের বিজয় ছিল একটি ঐতিহাসিক বিজয়। তাই ইতিহাসে বদর যুদ্ধের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনস্বীকার্য। এ যুদ্ধ ছিল সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে এবং অসত্য, জুলুম, অত্যাচার, অন্যায়, অবিচার ও অবৈধ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে। এ যুদ্ধে মুসলমানরা সংখ্যায় অনেক কম হয়েও মক্কার কাফির পরাশক্তিকে পরাজিত করে ইসলামের স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাসের সূচনা করে। এর মাধ্যমে সত্য মিথ্যার পার্থক্য সূচিত হয় এবং মুসলিম উম্মাহ দ্বীন কায়েমের অনুপ্রেরণা পায়। এজন্য এ যুদ্ধকে সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী বলা হয়।
আমাদের প্রিয় নবী মুহম্মদ (সা.) পবিত্র ভূমি মক্কা থেকে মদিনা মুনাওয়ারায় হিজরত করার পর সেখানে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন এ রাষ্ট্রের প্রধান। তিনি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শান্তি এবং নিরাপত্তার লক্ষ্যে মদিনার অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর সাথে একটি শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ হন। এটি মদিনা সনদ নামে পরিচিত। মদিনায় রাসুল (সা.) তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বে অতি অল্প সময়ের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্ত জাতিকে একটি সুশৃঙ্খল জাতিতে পরিণত করেন। একটি নতুন ধর্ম ও রাষ্ট্রের উত্থান এবং রাসুল (সা.) ও মুসলমানদের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি মক্কা-মদিনার ইসলামবিরোধী শক্তিগুলোর জন্য প্রবল আতঙ্ক ও গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া ইসলাম নামক নতুন ধর্মের উদ্ভবে তাদের প্রাধান্যও খর্ব হয়।
এ স্বতন্ত্র মদিনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে মক্কা থেকে সিরিয়া পর্যন্ত কুরাইশদের যে সীমাহীন অবাধ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠিত ছিল তাতে বিঘœ ঘটে। এ জন্য মক্কার কুরাইশরা মদিনায় নব প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে। এমনকি মদিনা আক্রমণ করে তারা রাসুল (সা.) এবং ইসলামকে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করে। তারই অংশ হিসেবে তারা কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে একটি বাণিজ্যিক কাফেলা সিরিয়ায় পাঠিয়েছিল অস্ত্রশস্ত্র ও খাদ্য-সামগ্রী নিয়ে আসার জন্য। মক্কার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা কেউ বাদ পড়েনি এ বাণিজ্যে পুঁজি বিনিয়োগ করতে। রাসুল (সা.) এক পর্যায়ে সংবাদ পেলেন আবু সুফিয়ান সিরিয়া থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও খাদ্য-সামগ্রীর বিশাল সম্ভার নিয়ে মক্কায় ফিরছেন। শুধু বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং পূণ্যের কাজ এবং সামাজিক কর্তব্য মনে করে সবাই এতে অংশগ্রহণ করেছিল।
আজকের নলজুর/আরএন/১৮-০৩-২৫ইং