সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:-
সুনামগঞ্জে টমেটো চাষ করে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুুখীন হয়েছেন চাষীরা। অস্বাভাবিক দরপতন, ক্রেতা ও সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় ক্ষেতেই পঁচে নষ্ঠ হচ্ছে কৃষকের চাষ করা শতশত মন টমেটো। শুধু টমোটো নয় কাঁচা মরিচ ও বেগুনের দামও কম হওয়ায় উৎপাদন খরচ তোলা নিয়েও দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে চাষীদের।
জানা যায়, গত বছর সবজির ভালো দাম পেয়ে চলতি বছর ধান চাষ কমিয়ে সবজির উৎপাদন বাড়িয়েছেন সুনামগঞ্জের কৃষকরা। আর এতেই কপাল পুড়েছে তাদের। অস্বাভাবিক দরপতন, ক্রেতা সংকট ও সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায় সারি সারি গাছে পাকা টমেটো ক্ষেতেই পঁচে গলে নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে নিয়ে আসা অবিক্রিত টমেটো ফেরত নিলে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ লাগবে বলে নদীতেই ভাসিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। বিক্রি করতে না পেরে ভেড়ার পাল দিয়ে ক্ষেতে পড়ে থাকা টমেটো খাওয়াচ্ছেন চাষীরা। পানির দামে টমেটো, কাঁচামরিচ ও বেগুন বিক্রি করে লোকসানে পড়েছেন চাষীরা। তবে টমেটো ও কাঁচা মরিচ চাষ করে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন জামালগঞ্জ উপজেলার চাষীরা। প্রতিবিঘা জমি চাষ করতে চারা, শ্রমিক, সার কীটনাশকসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হলেও প্রতিকেজি টমেটো বিক্রি করতে হচ্ছে ১ থেকে ২ টাকায়। এতে ধার দেনাসহ ঋণ করে চাষাবাদ করে সর্বস্ব হারিয়ে এখন ঋণের টাকার দায়ে ঘরবাড়ি ছাড়তে হবে জানান ভোক্তভোগী কৃষকরা ।
জামালগঞ্জ গ্রামের কৃষক আব্দুল আলীম জানান, প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ করে দুই বিঘা টমেটো চাষ করেছি। এখনো পর্যন্ত মাত্র ৫ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করতে পেরেছি। ক্রেতা নেই, পাইকার নেই, সেই সাথে সংরক্ষনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষেতেই পচে নষ্ঠ হচ্ছে টমেটো। সরকারি সহায়তা ছাড়া আর বাঁচার কোন উপায় দেখছি না।
কৃষক হালিম মিয়া জানান, চারা, সার, কীটনাশক, কামলা খরচসহ প্রতিবিঘা জমি চাষাবাদে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হলেও কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। উৎপাদন খরচতো তোলাতো দূরে থাক এখন ঋণের টাকার দায়ে বাড়িঘর ছাড়তে হবে আমাদের। আগামীতে আর সবজি চাষ করার মতো সাধ্য নাই আমার।
সবজি চাষী খোকন মিয়া জানান, ঋণ করে কিস্তি তোলে চাষাবাদ করেছিলাম। এখন টমেটো, কাঁচা মরিচ, বেগুন পানির দামে বিক্রি হচ্ছে। আমাদের বাঁচার কোন উপায় নাই। কিস্তির টাকার জন্য লোক বাড়িতে এসে বসে থাকে। কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে আবারো ঋণ করতে হচ্ছে। সরকারি সাহায্য ছাড়া আমাদের ছেলে মেয়ে নিয়ে বেঁচে থাকাটাই এখন কষ্টের। বাড়িঘর ছেড়ে এখন ঋণের দায়ে পালাতে হবে।
এ ব্যপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ জানান, গত বছর সবজির ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা ধান চাষ বাদ দিয়ে সবজি চাষ করে বেশি। যার কারনে ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। আগামীতে কৃষকদের প্রনোদনাসহ কৃষকদের সবজি সংরক্ষনের স্বার্থে একটি হিমাগার নির্মাণের কথা ভাবছি আমরা। যাতে কৃষকরা তাদের ফলানো সবজি সংরক্ষণ করতে পারে। এতে কৃষকরা ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
আজকের নলজুর/আরএন/০৭-এপ্রিল-২৫ইং
সম্পাদকঃ জুবায়ের আহমদ হামজা, বার্তা সম্পাদকঃ বিপ্লব দেবনাথ। অফিস: ব্যারিস্টার মির্জা আব্দুল মতিন মার্কেটে, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।
Email:- ajkernaljur@gmail.com Mob:- 01880597469