হাবিবুল কবির শুভ, দোয়ারাবাজার প্রতিনিধিঃ-
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে ভয়াবহ কালবৈশাখী ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বিভিন্ন এলাকায় বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়েগেছে গাছপালা। আধ-ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রচুর গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়েছে। এতে উপজেলা সদরসহ আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং উঠতি বোরো ফসল ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বসতঘর বিধ্বস্ত হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শতাধিক পরিবারের লোকজন এখন খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নিয়েছেন।
শনিবার রাত থেকে এই রিপোর্ট লেখার সময় রবিবার বিকাল তিনটা পর্যন্ত পুরো উপজেলা বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এদিকে উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের চামতলা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার তিনটি শ্রেণি কক্ষ লন্ডভন্ড ও বিধ্বস্ত হয়েছে। অন্য দিকে মধ্যে রাতে আকষ্মিক ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার সদর ইউনিয়নের লামাসানিয়া, পরমেশ্বরীপুর, দলেরগাঁও, বাতলারটেক, বীরসিংহ, রাখালকান্দি, টেবলাই, মাইজখলা, বড়বন্দসহ উপজেলার সুরমা, লক্ষ্মীপুর, নরসিংপুর, বোগলাবাজার, বাংলাবাজার, মান্নারগাঁও, দোহালিয়া, পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে কাঁচা ও টিনের বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে সদর ইউনিয়নের লামাসানিয়া গ্রামে প্রচুর বাড়িঘর ভেঙে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ে দোয়ারাবাজার উপজেলার অন্তত ৫০টি গ্রামে প্রচুর গাছ এবং বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়েছে এবং বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব এলাকায় ঝড় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে উপজেলা সদরসহ আশপাশের এলাকা। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পাকা বোরো ফসলের। লামাসানিয়া (উত্তর পাড়া) গ্রামের আজিজুর রহমান বলেন, মধ্যরাতে হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় এসে বসত ঘরের টিনের চাল উড়িয়ে নেয়। ঝড়োবৃষ্টির মধ্যেই অন্যের ঘরে উঠে কোন রকম প্রাণে রক্ষা পেয়েছি। সবকিছুই তছনছ হয়ে গেছে। পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো বলতে পারছি না। একই গ্রামের শানুর মিয়া স্ত্রী সামসুন নাহার বলেন, কিছু বুঝে উঠার আগেই হঠাৎ তুফানে আমার বসত ঘরের বারান্দা মুহুর্তেই ঝড়োবাতাসে উড়ে যায়। ছেলে মেয়ে নিয়ে পাশের বাড়িতে গিয়ে কোন রকম উঠতে পেরেছি।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লামাসানিয়া গ্রামের হাফিজ মিয়া, আব্দুল হান্নান, জাকির মিয়া, জামির মিয়া, ইনসান মিয়া, হোসেন মিয়া, রবিউল, আফিল উদ্দীন, সাফির উদ্দিন, মামুন মুন্সী’র বসত ঘরের টিনের চালা উড়ে গেছে।নরসিংপুর ইউনিয়নের সানিয়া, লাস্তবের গাঁও, মুকির গাঁও, প্রতাবের গাঁও, দোয়ারগাঁও, ফুলকারগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। সানিয়া গ্রামের আলাল মিয়া, জসিম, মাশুক মিয়ার ঘর সম্পুর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ে সব কিছু হারিয়ে এখন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোতে মাতম চলছে।
লামাসানিয়া মধ্যপাড়া গ্রামের কৃষক হবিবুর রহমান, কাসেম মিয়া, রফিকুল মিয়া, সুজন মিয়া ও শুক্কুর আলী জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে পাকা ধান সম্পুর্ন বিনষ্ট হয়ে গেছে। ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়ে লামাসানিয়া গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বসতঘর বিধ্বস্ত হওয়ায় অনেক পরিবার এখন খোলা আকাশের নীচে। মাথাগোঁজার ঠাঁই নেই অনেকের।এদিকে উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের নুরপুর, আলীপুর, সোনাপুর, বৈঠাখাই, টেংরাটিলা, আজবপুর, শান্তিপুর, মহব্বতপুর, গোজাউড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়ে সুরমা ইউনিয়নে বিভিন্ন গ্রামে অন্তত ২৫/৩০ টি বসত ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বোরো ফসলের।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নেহের নিগার তনু জানান, এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ে শতাধিক ঘরবাড়ি ও প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পেয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রনয়ন করা হচ্ছে।
আজকের নলজুর/আরএন/২৭ এপ্রিল ২৫ইং