1. admin@ajkernaljur.com : admin :
টাঙ্গুয়ার হাওর ইসিএ ঘোষণা হলেও,হয়নি জীববৈচিত্র্যের অবনতিরোধ - আজকের নলজুর
২৩শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ| গ্রীষ্মকাল| শুক্রবার| সকাল ৭:০৪|

টাঙ্গুয়ার হাওর ইসিএ ঘোষণা হলেও,হয়নি জীববৈচিত্র্যের অবনতিরোধ

রিপোর্টার
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, মে ২২, ২০২৫,
  • 31 দেখা হয়েছে

আহম্মদ কবির,সুনামগঞ্জ:-

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে ঝুকিপূর্ণ বিবেচনা করে ঝুঁকিতে ও বিপন্ন দশা থেকে টাঙ্গুয়ার হাওর কে অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। সরকার ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওর কে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা(ইসিএ)ঘোষণা হলেও,হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পরিস্থিতির অবনতিরোধ প্রবণতা থামা তো দূরের কথা,উল্টো টাঙ্গুয়ার হাওরের অবনতির মাত্রা আরো বেড়ে রয়েছে হুমকিতে।তার চেয়ে বেশি হতাশার বিষয় হলো টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য অবনতি বেড়ে যাওয়ার পেছনে অধিক আগ্রাসী ভূমিকায় রয়েছে হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা।

বুধবার দিনব্যাপী টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে দেখাযায় হাওরের ছোট-বড় সবকটি বিলে চায়না দোয়ারি জাল,প্লাস্টিকের ছাই,কোনাজাল সহ নিষিদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে জেলেরা মাছ ধরার জন্য অবাধে ঘুরাফেরা করছে।এসময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাওর পাড়ের একাধিক জেলের সাথে কথা হলে উনারা বলেন মাছ নেই হাওরে তবুও পেটের ক্ষুধায় আসতে হয়। এই বছর হাওরের জীববৈচিত্র্য বিধ্বংসী ইলেক্ট্রিক শক মেশিন ও বিষ  দিয়ে যেভাবে মাছ ধরছে কীভাবে মাছ থাকবে।উনারা বলেন এইভাবে চলতে থাকলে হাওরের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।

তথ্যসুত্রে জানাযায় টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত।দুই উপজেলার ১৮টি মৌজায় ৫১টি হাওরের সমন্বয়ে ৯হাজার ৭শত ২৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর জেলার সবচেয়ে বড় জলাভূমি। পানিবহুল মূল হাওর ২৮ বর্গকিলোমিটার এবং বাকি অংশ বসতি ও কৃষি জমি।একসময় গাছ-মাছ-পাখি আর প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্যের আধার ছিল এই হাওর।কিন্তু ইজারাদাররা নিয়মবহির্ভূত ভাবে মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের ফলে ধীরে ধীরে হাওরটি ঝুঁকিতে ও বিপন্ন দশায় নেমে আসে।ঝুঁকি ও বিপন্ন দশা থেকে টাঙ্গুয়ার হাওর কে অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।

১৯৯৯ সালে সরকার হাওরটি কে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করার পর থেকে এই হাওরের ইজারাদারি প্রথা বন্ধ হয়ে যায়।পরবর্তীতে ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি হাওরটিকে রামসার স্থান হিসাবে ঘোষণা করা হয়। আর এ উভয়বিধ ঘোষণার ফলে স্থানীয় সচেতন মহল ধারণা করেছিল টাঙ্গুয়ার হাওর শুধু রক্ষাই পাবে না,এই বিশাল জলাভূমির মৎস্য সম্পদ,বন গাছ-গাছালি পরিযায়ী পাখি ও বণ্যপ্রাণীসহ জীববৈচিত্র্য আবার তার হৃত সমৃদ্ধি ও গৌরব ফিরে পাবে।সেই লক্ষ্যে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে কয়েক দফা প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করেছে আইইউসিএন,বর্তমানেও হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জেলা প্রশাসকের নিয়ন্ত্রণে ২৪জন আনসার ও হাওর উন্নয়ন সমিতির লোকজন কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু সে প্রত্যাশা পুরণ হওয়া তো দূরের কথা,মাছের প্রজনন কেন্দ্র টাঙ্গুয়ার হাওরে মাছের সংকট দেখা দেওয়ায়,হাওর পাড়ের মানুষ এখন পুকুরের চাষকৃত মাছের উপর নির্ভরশীল।যদিও এখানকার মানুষ এসব মাছ খেয়ে অভ্যস্ত না।

টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের জয়পুর গ্রামের প্রবীণ মুরব্বি ইজারাদারের সময়ে সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা কালামিয়া জানান আমরা আগে প্রচুর মিঠাপানির মাছ খাইতাম,ইজারাদার যখন ছিল হাওর শাসন ছিল,হাওরের প্রচুর পরিমাণ কাটাবাঁশ দেওয়া হইতো।এইভাবে কারেন্টের মেশিন,বিষ,সেচ দিয়া মাছ ধরা হতো না। এখন কতপ্রকার জাল দেখতাছি চায়না দোয়ারি জাল প্লাস্টিকের ছাই,এইতার নাম আগে আমরা শুনছিয়েই না।সেই সময় টাঙ্গুয়ার হাওর দিয়া এইপাড় থেকে হেইপাড়ে গেলে দুইএকটা রুইমাছ নৌকায় লাফাইয়া উঠতো,আর এখন রুইমাছ চোখেই দেখি না।উনি বলেন শুনেছি টাঙ্গুয়ার হাওরে ইজারা দেওয়া বাদ করে সরকার হাওরের বনজঙ্গল গাছপালা বন্যপ্রাণী,পরিযায়ী পাখি ও মৎস্য সম্পদসহ  জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য হাওরের প্রতি বাড়তি যত্ন,নজর ও পরিচর্যা নিশ্চিত করবে,যাতে হাওরের জীববৈচিত্র্য আবার পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়,প্রশাসনের অবহেলায় হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় শুধু ব্যর্থই হয়নি,বরং তারা লোভের বসতে হাওরটিকে বাড়তি আয়ের উৎস বানিয়ে হুমকিতে ফেলে দিয়েছে।

টাঙ্গুয়ার হাওর কেন্দ্রীয় সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির সম্মানিত সদস্য ও ইকো – ট্যুরিস্ট গাইড অখিল তালুকদার জানান প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা টাঙ্গুয়ার হাওর কে সংকটাপন্ন থেকে হাওরের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিলেও স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলার সুযোগে,হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দায়িত্বে থাকা লোকজন অর্থের লোভে এই সংকটাপন্ন হাওরে জীববৈচিত্র্যের ধ্বংসাত্মক ইলেক্ট্রিক শক মেশিন দিয়ে মৎস্য আহরণ, বিষপ্রয়োগে মৎস্য ও পাখি নিধন সেচ দিয়ে মৎস্য আহরণ এছাড়াও নিষিদ্ধ সরঞ্জাম কোনাজাল ও চায়না দোয়ারি জাল দিয়ে মৎস্য আহরণের সুযোগ করে দেওয়ায় হাওরটি এখন প্রায় মাছ শূণ্য ও হাওরের জীববৈচিত্র্যও রয়েছে হুমকির মুখে।

হাওরটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে করনীয় কী, এমন প্রশ্নের জবাবে উনি বলেন প্রথমেই হাওরে সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের জবাবদিহীতার আওতায় আনা,হাওরের উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। মাছের অভয়াশ্রমে বাঁশ স্থাপন,এছাড়াও পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়া বিল ও নদী পরিকল্পিত ভাবে খননের ব্যবস্থা,উজাড় হয়ে যাওয়া বনজঙ্গল ও গাছগাছালি সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণ করে বনায়ন তৈরি।উনি বলেন এই হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের নামে কয়েক দফা প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।কিন্তু  জীববৈচিত্র্য সম্প্রসারণ দূরের কথা,অবনতিরোধ করতেও ব্যার্থ হয়েছে প্রকল্পগুলো।

আজকের নলজুর/আরএন/২২-মে-২৫ইং

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরো খবর
© All rights reserved © 2023 আজকের নলজুর
Design and developed By: Syl Service BD