মোঃ মুকিম উদ্দিন জগন্নাথপুর প্রতিনিধি:-
গতকাল পবিত্র শবে বরাত সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার প্রতিটি জামে মসজিদে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের সহিত পালিত হয়েছে। এই দিনটি আসলে মুসলমানগণ আমলের প্রতি উৎসাহিত হয়। সারারাত বিভিন্ন ধরনের আমলে ছোট বড় সকলে মশগুল থাকে এবং দিনের বেলায় অধিকাংশ রোজা রাখেন।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বাদ মাগরীব মুসল্লিগণ মসজিদে মসজিদে আসতে থাকে এসময় ধারাবাহিক ভাবে এ দিনের তাৎপর্য, গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা, নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, তওবা ইস্তেগফার, মিলাদ-কিয়াম, কবর জিয়ারত সহ বিভিন্ন আমল রাতব্যাপী চলমান থাকে।
উপজেলার মসজিদে মসজিদে ইমামগনের বয়ানে বলেন, শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। শবে বরাত কথাটি ফারসি থেকে এসেছে। শব মানে রাত বরাত মানে মুক্তি। শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’। হাদিস শরীফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী বলা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশ পারস্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশের ফারসি, উর্দু, বাংলা হিন্দিসহ নানা ভাষায় যা ‘শবে বরাত’ নামেই অধিক পরিচিত।কোরআনুল কারিমে এসেছে, ‘হা-মিম! শপথ! উজ্জল কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে; নিশ্চয়ই আমি ছিলাম শতর্ককারী। যাতে সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারিত হয়। এ নির্দেশ আমার তরফ থেকে, নিশ্চয়ই আমিই দূত পাঠিয়ে থাকি।’ (সুরা-৪৪ দুখান, আয়াত: ১-৫)। মুফাসসিরিনগণ বলেন: এখানে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা বরকতময় রজনী বলে শাবান মাসে পূর্ণিমা রাতকেই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি, রুহুল মাআনি ও রুহুল বায়ান)। হজরত ইকরিমা (রা.) প্রমুখ কয়েকজন তাফসিরবিদ থেকে বর্ণিত আছে, সুরা দুখান–এর দ্বিতীয় আয়াতে বরকতের রাত বলে শবে বরাতকে বোঝানো হয়েছে। (মাআরিফুল কোরআন)।
নবীজি (সাঃ) বলেন, এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনযোগ দেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।
হাদিস শরিফে আছে, ‘হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধশাবানের রাতে মাখলুকাতের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫, ইবনে মাজাহ: ১৩৯০, রাজিন: ২০৪৮; ইবনে খুজাইমা, কিতাবুত তাওহিদ, পৃষ্ঠা: ১৩৬, মুসনাদে আহমদ, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা: ১৭৬)। হযরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, “হে আয়শা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে?” আমি উত্তরে বললাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না।’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘তুমি কি জানো এটা কোন রাত?’ আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন।’ তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।’ (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮২)। পরিশেষে ফজরের নামাজের পূর্ব মূহুর্তে সমবেত মুসল্লীদের নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া মুনাজাত করা হয়। মুনাজতের সময় মসজিদে মুসল্লীগন কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিল। এ মুনাজাতে মুসল্লীদের ক্রন্দন ও আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভরাক্রান্ত হয়ে ওঠে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
আজকের নলজুর/বিডিএন/১৫-০২-২৫ইং