শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:-
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার দাউদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিম্নমানের কাজ করে লাখ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সোমবার বেলা ১২টায় এই অভিযোগ দেয়া হয়। এছাড়াও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে কাজ শেষ করার প্রত্যয়নপত্র তৈরির মাধ্যমে বিলের সমুদয় টাকা উত্তোলনের অভিযোগও করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেলার শাল্লা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের পিইডিপি-৪ এর অধীনে দাউদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেনীকক্ষ নির্মাণের কার্যাদেশ হয়। বিদ্যালয় শ্রেনীকক্ষ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৬৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৬৭ টাকা।
এই বিদ্যালয়ের কাজ পায় জেলার তালুকদার এন্টারপ্রাইজ। তবে এই ঠিকাদারী প্রতিতষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে কাজটি শুরু করেন সুলতান মিয়া নামের এক ব্যক্তি। দাউদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৮০ভাগ কাজ সম্পন্ন হলে উপ-সহকারি প্রকৌশলী নুরুজ্জামানের সাথে মনমালিন্য শুরু হয় সুলতান নামে এই ব্যক্তির। পরে নুরুজ্জামান উনার পছন্দের বিপ্লব নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে কোনোভাবে জোড়াতালির কাজ করান।
সরজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ভবনে ফ্লোরে ফাটল ধরেছে। কোনোভাবে জোড়াতালি দিয়ে কাজ শেষ করেছে। কাজ শেষ হওয়ার কয়েকমাস যেতে না যেতেই দ্বিতীয় তলা ও তৃতীয় তলায় ফ্লোরে ফাটল।
ঠিকাদার বিপ্লব তালুকদার জানান, আমি কারো স্বাক্ষর জালিয়াতি করিনি। প্রধান শিক্ষক নিজে ভবন গ্রহন করে স্বাক্ষর করেছে। তবে সভাপতির স্বাক্ষরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এটা অফিসের বিষয়। এর কিছু বলতে পারব না।
গত ১৪ জুন সিলেট তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অধিদপ্তরে ১৯৯ নং স্মারকে বলা হয়েছে দাউদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেনীকক্ষ নির্মাণ কাজ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সমাপ্ত করে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কিন্তু এই বিষয়ে শিক্ষা অফিসার কিছুই জানেন না।
তৎকালীন দায়িত্বে থাকা শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার রায় বলেন, দাউদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হস্তান্তর বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। এমনি প্রত্যয়নপত্রেও আমি স্বাক্ষর করিনি। তবে এলজিইডির একটি অফিসিয়াল প্রত্যয়নপত্রে আমার স্বাক্ষর দেখানো হয়েছে। এটি ভুয়া। কারন এই সংক্রান্ত বিষয়ে আমি কোনো স্বাক্ষর করিনি।
এ বিষয়ে সুলতান মিয়া জানান, আমি ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছি। কিন্তু উপ-সহকারি প্রকৌশলী নুরুজ্জামানের চাহিদাপুরণ না করায় উনার পছন্দের লোক দিয়ে বাকী কাজ করিয়েছেন। তিনি বলেন এই কাজের বাবদ ১৬ লাখ টাকা আমার পাওনা রয়েছে। কিন্তু বিল দিচ্ছে না। তিনি আরো জানান, নুরুজ্জামান সাহেবকে ঘুষ না দিলে বিলের টাকা উত্তোলণ করা যায় না। এমনকি ফাইনাল বিলে উনাকে ২ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। এছাড়াও প্রতি বিলে আলাদা ভাবে উৎকোচ দিতে হয় তাকে।
দাউদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রথীন্দ্র দাস জানান, এলজিইডির প্রত্যয়নপত্রে আমার যে স্বাক্ষর দেয়া হয়েছে সেটি জালিয়াতি। কারন আমার স্বাক্ষরের সাথে কোনো মিল নেই। আর শ্রেনীকক্ষের নির্মাণ কাজের বিষয় আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।
প্রধান শিক্ষক হিমাংশু শেখর রায় বলেন, বিদ্যালয়ের কাজ খুবই নিম্নমানের হয়েছে। তবে এসব কাজ শেষ হওয়ার পর আমাদেরকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। শুধুমাত্র ব্রেঞ্চ, টেবিল, চেয়ারসহ অন্যান্য কিছু আসবাবপত্র বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। পরে দেখা যায় শ্রেনীকক্ষ নির্মাণের কাজের বিষয় নাকি আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এমনকি প্রত্যয়নপত্রে আমাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করা হয়েছে। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব জানান, স্বাক্ষর জালিয়াতির একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আজকের নলজুর/০৪ডিসেম্বর২৩/বিডিএন