1. admin@ajkernaljur.com : admin :
জগন্নাথপুর পাইলগাঁও জমিদার বাড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিলুপ্তির পথে - আজকের নলজুর
২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ১৩ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ| বর্ষাকাল| শুক্রবার| বিকাল ৪:০৯|

জগন্নাথপুর পাইলগাঁও জমিদার বাড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিলুপ্তির পথে

রিপোর্টার
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪,
  • 78 দেখা হয়েছে

মোঃ মুকিম উদ্দিন,জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:-

প্রাচীন পুরাকীর্তির অন্যতম নিদর্শন পাইলগাঁও জমিদার বাড়ি। প্রায় পাঁচ একর ভুমির ওপর প্রতিষ্ঠিত তি শত বছরেরও বেশী পুরানো এ জমিদার বাড়িটি এ অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন।জমিদার বাড়িতে হতো পুঁথি পাঠ, পালা গান হতো এখানে বাদ যেতনা কোনো উৎসব। কেউ এখানে আসলে না খেয়ে ফিরে ও যেতে পারত না। গরী অসহায় ও দরিদ্রদের জন্য সহায়তার হাত সর্বদা খোলা ছিল এখানে।সুনামগঞ্জ পুরাকীর্তির অন্যতম নিদর্শন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁও’র জমিদার বাড়ি সম্পর্কে এমনটিই বলছিলেন ৭০ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধা।

প্রাচীন পুরাকীর্তির অন্যতম নিদর্শন হিসেবে সুপরিচিত সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার পাইলগাঁও’র জমিদার বাড়ি। প্রায় সাড়ে ৫ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত তিন শত বছরেরও বেশি পুরানো এ জমিদার বাড়িটি এ অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্যের নিদর্শন। আর এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্যমণ্ডিত বিশাল অট্টালিকাবহ জমিদার বাড়ির দক্ষিণ দিকে বহমান রয়েছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কুশিয়ারা নদী।স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, প্রায় দেড়শ বছর পূর্বে এ অঞ্চলে জমিদারী শাসনামলের পতন ঘটে।

১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় জমিদারগণ ভারতে চলে যান। তারপর থেকে পরিত্যক্ত এই জমিদার বাড়ি।যদিও এ জমিদার বাড়িটি এখন অযত্ন অবহেলায় ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে তবুও নতুন প্রজন্মের তরুণরা বেশ মনোযোগ সহকারেই বাড়িটি ঘুরে আসেন। কেউ কেউ পরিবার নিয়ে ঘুরে আসেন এই তিনশত বছরের পুরনো এই জমিদার বাড়িটি। পর্যটকরা বেশীর ভাগই এ বাড়িতে অবস্থিত দুইটি বিশাল শান বাঁধানো দিঘী, একটি সুন্দর কাছারিঘর যেখানে জমিদার বাবু প্রজাদের বিচার কাজ পরিচালনা করতেন এবং সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের রাখার জন্য কারাগারটি দেখে আকৃষ্ট হন।কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী রাশিম উদ্দিন বলেন, আমাদের জমিদার বাড়িটি ভ্রমণ পিপাসুদের মনের খোরাক জুগিয়ে আনন্দ দিয়ে আসছে।

সংরক্ষণের অভাবে বাড়িটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাতে বসেছে।একাধিক স্থানীয়রা জানান, এই জমিদার বাড়িটি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সংস্কার করে জরুরী ভিত্তিতে অবমুক্ত করে দেওয়া হোক। তা না হলে হারিয়ে যেতে পারে ইতিহাস ঐতিহ্যের লালিত এই জমিদারি প্রাসাদ। ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, জমিদার বাড়ির প্রবেশ দোয়ার জমিদার পরিবারের দেব ভোগ মন্দির জমিদারদের পারিবারিক মহল। এ জমিদার পরিবারের শেষ জমিদারব্রজেন্দ্র নারায়ন চৌধুরী ছিলেন প্রখাত শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ।

তিনি ছিলেন সিলেট বিভাগের কংগ্রেস সভাপতি এবং আসাম আইন পরিষদের সদস্য। সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলাধীন পাইলগাঁও ইউনিয়নের পাইলগাঁও গ্রামে ঐতিহ্যবাহী এ জমিদার বাড়ির অবস্থান। জমিদার বাড়ির দক্ষিণ দিকে সিলেটের কুশিয়ারা নদী বহমান। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক অচ্যুতচরন চৌধুরী পাইলগাঁও জমিদার বংশের রসময় বা রাসমোহন চৌধুরী হতে প্রাপ্ত সূত্রে লিখেছেন যে, পাইলগাঁওয়ে বহুপূর্বকালে পাল বংশীয় লোক বসবাস করত। এ গোষ্ঠীয় পদ্মলোচন নামক ব্যক্তির এক কন্যার নাম ছিল রোহিনী। কোন এক কারনে রাঢ. দেশের মঙ্গলকোট হতে আগত গৌতম গোত্রীয় কানাই লাল ধর রোহিনীকে বিবাহ করত গৃহ-জামাতা হয়ে এখানেই বসবাস শুরু করেন।

কানাইলাল ধরের আট পুরুষ পরে বালক দাস নামের এক ব্যক্তির উদ্ভব হয়।এ বালক দাস থেকে এ বংশ বিস্তৃত হয়। বালক দাসের কয়েক পুরুষ পর উমানন্দ ধর ওরফে বিনোদ রায় দিল্লির মোহাম্মদ শাহ বাদশা কর্তৃক চৌধুরী সনদপ্রাপ্ত হন। বিনোদ রায়ের মাধব রাম ও শ্রীরাম নামে দুই পুত্রের জন্ম হয়। তার মধ্যে মাধব রাম জনহিতকরন কর্মপালনে নিজ গ্রাম পাইলগাঁও এ এক বিরাট দীঘি খনন করে সুনাম অর্জন করেন। তার দেয়া উক্ত দীঘি আজও ঐ অঞ্চলে মাধম রামের তালাব হিসেবে পরিচিতহচ্ছে। মাধব রামের দুই পুত্র মদনরাম ও মোহনরাম। মোহনরামের ঘরে দুর্লভরাম, রামজীবন, হুলাসরাম ও যোগজীবন নামে চার পুত্রের জন্ম হয়।

এই চার ভাই দশ সনা বন্দোবস্তের সময় কিসমত আতুজানের ১ থেকে ৪ নং তালুকের যথাক্রমে বন্দোবস্ত গ্রহন করে তালুকদার নাম ধারন করে। এদের মধ্যে হুলাসরাম বানিয়াচং রাজ্যের দেওয়ানী কার্যালয়ে উচ্চ পদের কর্মচারী নিযুক্ত হন। হুলাসরাম চৌধুরী বানিয়াচং রাজ্যের রাজা দেওয়ান উমেদ রাজার অনুগ্রহে আতুয়াজান পরগনায় কিছু ভুমি দান প্রাপ্ত হন। হুলাসরামের প্রপ্ত ভুমির কিছু কিছু চাষযোগ্যও কিছু ভুমি চাষ অযোগ্য ছিল। পরবর্তীতে হুলাসরাম চাষ অযোগ্য ভুমিগুলোকে চাষযোগ্য করে তুললে এগুলোই এক বিরাট জমিদারিতে পরিনত হয়ে উঠে।

হুলাস রামের ভাতুস্পুত্র বিজয় নারায়ণের একমাত্র পুত্র ব্রজনাথ চৌধুরী জমিদারি বর্ধিত করে প্রভাবশালী জমিদারে পরিনত হন। ব্রজনাথ চৌধুরীর দুই পুত্র রসময় ও সুখময় চৌধুরী। রসময় চৌধুরীর পুত্র ব্রজেন্দ্র নারায়নই ছিলেন এ বংশের শেষ জমিদার।

আজকের নলজুর/২৩জানুয়ারি২৪/বিডিএন

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরো খবর
© All rights reserved © 2023 আজকের নলজুর
Design and developed By: Syl Service BD