1. admin@ajkernaljur.com : admin :
পিতার সঙ্গে পুত্রের মৃত্যু - আজকের নলজুর
২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ১৩ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ| বর্ষাকাল| শুক্রবার| দুপুর ১২:৪০|

পিতার সঙ্গে পুত্রের মৃত্যু

রিপোর্টার
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৪,
  • 66 দেখা হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার:-

জন্মিলে মরিতে হবে জানি আমরা সবাই পিতার মৃত্যু পুত্রের সঙ্গে মানবো কেমন করে।ঝালকাঠি জেলার ৫ নং কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র ডাকুয়া অত্যন্ত সাদাসিধা একজন মানুষ। দর্জি কাজ করে সংসার জীবন শুরু করে। তাদের দুইটি ছেলে হয় সুরেশ ও নরেশ।তাদের নিয়ে সুন্দরভাবেই পরিবারটি পরিচালনা করেন দর্জি কাজ করে।

কীর্ত্তিপাশা বাজারে একটি দোকান ছিলো। বড় ছেলেটি অল্প পড়াশোনা করে বাবার পেশাকে বেছে নিয়েছিলেন ।বড় ছেলে সুরেশ ডাকুয়া যখন টেইলার্সের কাজ শেখা সম্পন্ন হয় তখন পিতাকে টেইলার্স এর কাজ থেকে অবসরে রাখেন। বড় ছেলে সুরেশ একাই দোকান পরিচালনা করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। তখন পরিবার থেকে তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে নিপা রায় এর সঙ্গে।

সংসার শুরু হয় তাদের ঘরে একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে তার নাম লোকেশ। সুন্দর ভাবে আনন্দের সঙ্গে সংসার চলছে প্রত্যেকদিন বাড়ি থেকে যাতায়াত করা কীর্ত্তিপাশা। প্রতিদিন যাতায়াত করা একটু কষ্টসাধ্যের কাজ তাই সিদ্ধান্ত নেয় কীর্ত্তিপাশা বাজারে থাকবে বাসা ভাড়া নিয়ে স্ত্রী নিপা রায় ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে।বাড়িতে মা-বাবা ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়ে পিতা-মাতাও কীর্ত্তিপাশা নাতিকে দেখার জন্য ছুটে যেত গ্রামে নিজেদের গাছের সবজি ফল পাকরা নিয়ে সুরেশের কাছে। বাবাকে আর্থিক সহযোগিতা করার দরকার হতো না গ্রামের জায়গা জমিতে যে ফসল উৎপাদন হত তাতেই নারায়ন চন্দ্র ডাকুয়ার চলে যেত। সুরেশ ডাকুয়া একমাত্র সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে ভালোই চলছিল ধর্মের প্রতি তার অঘাত বিশ্বাস তৈরি হয়।

শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর একজন ভক্ত হিসেবে সেবা পূজা করতেন। ১২ই এপ্রিল স্ত্রী এবং সন্তানকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ বারদী লোকনাথ মন্দিরে রওনা দেয় দীর্ঘ আট দিন বারদী মন্দিরে সময় কাটায়।সেখানে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপভোগ করে সুরেশ ও নিপা একমাত্র সন্তানকে নিয়ে ২০শে এপ্রিল শনিবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে নারায়নগঞ্জের কাচপুরের কাউঢালা এলাকায় এসে রাস্তা ক্রচিং করার সময় একটি বাস এসে পিতা পুত্রের শরীরের উপর থেকে চলে যায় ।পুত্র লোকেশ সেই স্থানে পিষে যায় রাস্তার উপরে। পুত্রের বয়স মাত্র ৭বছর।সুরেশের অবস্থাও খুব খারাপ। তাকে পথিক এবং পুলিশের সহযোগিতায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেলে যাওয়ার পূর্বেই এই মায়ার জগৎ ছিন্ন করে চিরদিনের জন্য না ফেরার দেশে চলে যায়। স্ত্রী পিছনে থাকায় গাড়ির ধাক্কা লেগে রাস্তার বাইরে ছিটকে যায় হাত পা ভেঙ্গে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কেটে চিরে যায়।বুকের হাড় ভেঙে যায় কিন্তু প্রানে বেঁচে যায় নিপা রায়।এই বাঁচা কে কেমন বাঁচা বলে। যেখানে একমাত্র সন্তান এবং যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা তিল তিল করে সংসার গড়া স্বামী সন্তানকে একসাথে হারাবার কষ্ট কতটা হতে পারে লিখে বা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। এই ঘটনা ঘটার পরে তাদের মোবাইল ফোন থেকে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে স্থানীয়রা।

যখনই পরিবার জানতে পারে পরিবারের সদস্যরা তৎক্ষণাৎ গন্তব্য স্থানে ছুটে গিয়ে সাদা কাপড় মোড়ানো অবস্থায় দেখতে পায় রক্তের বন্ধনে যাদের সঙ্গে ছোট থেকে বড় হওয়া সুরেশ ও তার সন্তানকে।এটা যে কত কষ্টের হতে পারে কত বেদনার। সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে এই শোকের খবর। মানুষের মৃত্যু হবে মায়ার জগৎ ছিন্ন করে চলে যাবে এটাই স্বাভাবিক ।ধর্মীয় স্থানে আটটা দিন সন্তানকে নিয়ে কাটিয়ে আর বাড়ি ফেরা হলো না। এ কেমন মৃত্যু। আজ তাদের পরিবার ও এলাকাবাসী সবাই শোকাহত। আর কত মায়ের বুক খালি হবে সড়কপথে।

আমাদের জীবনের নিরাপত্তা কে দিবে? এই সহজ সুরেশের সহধর্মীনীর দায়িত্ব কে নেবে?রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চালক এবং গাড়ির নামটা পর্যন্ত কেউ বলতে পারেনি বিভিন্ন টিভি চ্যানেল থেকে এই দুর্ঘটনার খবরটি প্রকাশ করেছেন কিন্তু এখনো উক্ত গাড়িটির বা ঘাতক ড্রাইভারকে পাওয়া যায়নি। তার মানে ঘাতক ড্রাইভার আবারো কোন পরিবারকে অন্ধকারের জগতে পাঠিয়ে দিবে।

আমাদের সড়কপথে কোন গাড়িটি কখন কোথা থেকে যাচ্ছে কয়টার সময় এই ঘটনা ঘটেছে তার একটি রেজুলেশন থাকা দরকার। আমাদের সরকার কর্তৃক কর্মকর্তাদের কাছে সুরেশের মৃত্যুর সময়টা আর ওই গাড়ির দুর্ঘটনার সময়টাকে হিসাব করে বাস টার্মিনাল থেকে সংরক্ষণ করা সম্ভব কিন্তু আমরা সবাই আমাদের সমাজকে উন্নতির দিকে ধাবিত করার চেষ্টায় রাস্তাঘাট পরি পার্টি করার চেষ্টা করে থাকি।কিন্তু প্রতিদিন কত পরিবার এভাবে তার প্রিয়জনকে হারায় কত পরিবার বেঁচে থাকে পঙ্গুত্ব জীবন নিয়ে। নিপা রায় বেঁচে আছে কিন্তু সে কি কখনো ভালো থাকতে পারবে তার মুখে কি আর কখনো হাসি ফুটবে স্বামী সন্তানকে হারিয়ে কিভাবে ভালো থাকবেন। এই চিন্তাটুকু কে করবে সরকার কর্তৃক দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ঘাতক গাড়ি চালকদের কঠিন আইনের ব্যবস্থা করা হোক এবং দুর্ঘটনায় যে পরিবারটি তার প্রিয়জনদের হারায় তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সেই পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব বহন করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাই।

আর যেন কোন মা অকালে তার সন্তানকে না হারাতে হয়। সুরেশের মা-বাবা আদরের ছোট ভাই সবাই আজ বাকরুদ্ধ অবস্থায় বেঁচে আছে। ছোট ভাই নরেশ তার ফেসবুকের ওয়ালে পোস্ট করেছে দাদা আমাকে ভাই বলে আর কে ডাকবে?কি দায়িত্ব দিয়ে চিরদিনের জন্য চলে গেলে। কে ডাকবে আমাকে কাকা বলে এই কথার মূল্যায়ন কে করবে। উপরের সকল তথ্য নরেশের কাছ থেকে নিয়ে এই লেখাটি টাইপ করেছি। আমি সুরেশ ও নরেশের প্রতিবেশী দাদা। চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস পেশায় একজন চিত্রশিল্পী খুলনা শহরে থাকি।ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে সবসময় যুক্ত রাখি। এই ঘটনা ঘটার পরে তাৎক্ষণিকই বিষয়টা জানতে পারি আমার পরিবার থেকে। আমি গ্রামের সকল কিছু প্রকাশ করার চেষ্টা করি জানা মাত্র ।কিন্তু এই লেখাটি বেশ কয়েকবার শুরু করেও বন্ধ করে দিয়েছি মেনে নিতে পারছি না এই অকাল মৃত্যুকে। আমি বাড়িতে গেলে ওদের সবার সঙ্গে দেখা হয় সবাই আমাকে অনেক সম্মান করে। সুরেশ দাদা বলে ডাকবে না এ কথা ভাবতেই পারছি না।

মহান সৃষ্টিকর্তা এমনটা কেন করলেন। পরিবারে প্রদীপ জ্বালাবার মতো কাউকে রাখলেন না কি দোষ ছিল ছোট্ট শিশু লোকেশ ডাকুয়ার। এই অল্পবয়সেই তাকে চলে যেতে হল মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে। কিছুই দেখেনি কিছুই জানতে পারেনি। ১০ মাস ১০ দিন গর্ভে রেখে যে মা জন্ম দিয়েছিল পৃথিবীর আলো দেখিয়েছিল তার সম্মুখে তাকে মাটি দিতে হলো।

আমার লেখাটি যারা পড়বেন সবাই শোকাহত পরিবারের জন্য শুভ কামনা করবেন। এবং ছোট ভাই নরেশ এর জন্য শুভ কামনা করবেন সে যেন তার পিতা-মাতা ও শ্রদ্ধেয় বৌদি এবং নিজের স্ত্রী পুত্রকে নিয়ে ভালো থাকতে পারে। তারা যেন এই শোক কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে দুহাত জোড় করে প্রার্থনা করি যে কোন ধর্মের যেকোন প্রাণীর মৃত্যু যেন এতটা করুন না হয়।

জীবনে এমন একটি লেখা টাইপ করতে হবে এটা ভাবিনি আমি খুব ব্যথিত এমন লেখা যেন কারো না লেখা লাগে ।

আজকের নলজুর/২৩এপ্রিল২৪/বিডিএন

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরো খবর
© All rights reserved © 2023 আজকের নলজুর
Design and developed By: Syl Service BD