1. admin@ajkernaljur.com : admin :
বজ্রপাত আতঙ্কে গ্রামীন জনজীবনে ঝুকি - আজকের নলজুর
২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ১৩ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ| বর্ষাকাল| শুক্রবার| সকাল ১০:৪৩|

বজ্রপাত আতঙ্কে গ্রামীন জনজীবনে ঝুকি

রিপোর্টার
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, জুন ১১, ২০২৪,
  • 185 দেখা হয়েছে

মোঃ মুকিম উদ্দিন, জগন্নাথপুর প্রতিনিধি:-

দেশের প্রথম শ্রেনীর দৈনিক পত্রিকা সহ টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে সাম্প্রতিক কালে জলবায়ু পরিবর্তন ও জনজীবনে তার প্রভাব নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে ‘বজ্রপাত’ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একটি সাধারণ ইস্যু হলেও এশিয়া মহাদেশে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়াতে বজ্রপাতের প্রভাব প্রকট।

সম্প্রতি বাংলাদেশে এর প্রবণতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। যদিও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত ঘটে ভেনিজুয়েলা ও ব্রাজিলে। কিন্তু সেখানকার তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার বেশি যেখানে সম্প্রতি বজ্রপাতে সর্বাদিক দেশের ছয়টি জেলায় একদিনে মোট ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশের সরকারি পর্যায়ে পরিচালিত আবহাওয়া অফিস বলছে আগামী কয়েকদিনে দেশের বেশ কিছু এলাকায় আগাম বজ্র্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে যদিও প্রতিবছর এ সময়গুলোতে কাল বৈশাখির ছোবলে বজ্রপাত সহ বৃষ্টিপাত খুবি সাভাবিক ঘটনা।

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাধারণত কিউমুলোনিম্বাস বা ঝড়োপুঞ্জ মেঘ থেকে বজ্রপাত ও বৃষ্টি হয়। তাই একে বজ্রগর্ভ মেঘও বলা হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এপ্রিল-মে মাসে দেশে বজ্রগর্ভ মেঘের পরিমাণ বেড়েছে। তার একটা অন্যতম কারণ বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য, আরেকটা হলো তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া। আর এ তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত দূষণ। বায়ুতে দূষণের মাত্রা যত বাড়ছে, গড় তাপমাত্রা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, গাছপালা কেটে ফেলা, বাতাসে ধূলিকণা বেড়ে যাওয়া এবং মোবাইল টাওয়ারের মতো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে বেড়েছে বজ্রপাত। তবে আমাদের দেশে বজ্রপাতের মূল কারণ, দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান। এর কারন হিসাবে দেখা দিয়েছে তাল, নারিকেল, সুপারি ও বট বৃক্ষের মত বড় গাছের অভার, কৃষি যন্ত্রপাতিতে ধাতব দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধি, নদনদী শুকিয়ে যাওয়া, জলভূমি ভরাট হওয়া, গাছ পালা ধংসের কারনে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি বজ্রপাতের হার বাড়ার অন্যতম কারন। আবার আবহাওয়াবীদগণ বলছেন দক্ষিন বঙ্গোপসাগর থেকে আসা আর্দ্র বায়ূ এবং উত্তর হিমালয় থেকে আসা শুষ্ক বাতাসের মিলনে বজ্রমেঘ, বজ্রঝর ও বজ্রপাতের সৃষ্টি হচ্ছে। দেশের প্রতি বর্গ কিলোমিটার এলাকায় গড়ে ৪০টি বজ্রপাত হয়ে থাকে। এই বিষয়টি যেহেতু পরিবেশের সাথে সম্পৃক্ত তাই গবেষনা, গবেষক ও জাতীয় নীতি নির্ধারনীতে তার প্রভাব নিয়ে তেমন কোন খবরাখবর পাওয়া যায় না এই কারনে যে গবেষনা বিষয়টি সবসমই একটি অনগ্রাধিকারের বিষয় যা জাতীয় পরিকল্পনা কিংবা জাতীয় বাজেটেই হউক। তারপরও সারা পৃথিবীব্যাপী কিংবা বাংলাদেশে কিছু কিছু গবেষনা সম্পন্ন হয়েছে। বিশ্বব্যাপী বজ্রপাতের অবস্থান নির্নয়ের গবেষনায় দেখা যায় যে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে মোট বজ্রপাতের সংখ্যা ১৮০০ ছাড়িছে গেছে প্রতি বর্গকিলোমিটারে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট সেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত জলবায়ুর পরিবর্তনে বাংলাদেশে অতিমাত্রায় বজ্রপাত হয়ে থাকে। গবেষণায় এটাও বলা হয় যে, বর্তমানে বিশ্বে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর হার বাংলাদেশে। নাসার জি আই এস এস এর গবেষক কাল প্রাইস তার গবেষনায় উল্লেখ করেছেন জলবায়ূ পরিবর্তন দুটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বজ্রপাত ও দাবানলকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে থাকে এবং পরিবেশে এখন যে পরিমান কার্বন আছে তার যদি দ্বিগুন বৃদ্ধি ঘটে তা হলে বজ্রপাত ঘটবে ৩২ ভাগ। তার মতে বায়ু দুষনের সাথে বজ্রপাতের সম্পর্ক খুবি নীবিড়। বেশির ভাগ গবেষকই মনে করেন বাতাসে সালফার ও নাইট্রোজেনের যৌগগুলোর পরিমান, তাপ শোষন ও সাময়িক সংরক্ষনকারী গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধির সংগে বজ্রপাত বাড়া কিংবা কমার সর্ম্পক রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসি বাঙ্গালী গবেষক উল্লেখ করেছেন দেশের উচ্চশীল গাছপালা কিংবা বনায়ন কমে যাওয়ায় বজ্রপাত ঘটনা ত্বরান্বিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বের গড় তাপমাত্রা এক ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়লে বজ্রপাত অন্তত ১৫ শতাংশ এবং ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস বাড়লে ৫০ শতাংশের বেশি বজ্রপাত হতে পারে। কয়েকটি দেশের হিসাব কষে এই ফল দেয়া হয়েছে। কঙ্গোয় ভূমি থেকে এক হাজার মিটারের বেশি উচ্চতায় কিফুকা পর্বতের এক গ্রামে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়- বছরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে দেড়শ’বার। পরবর্তী অবস্থানে আছে ভেনিজুয়েলা, উত্তর ব্রাজিল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া। বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ৪৫ বার বজ্রপাত হয়। সেই হিসাবে বছরে এই সংখ্যা প্রায় দেড়শ’ কোটি বার। বিশ্বের হিসাব যাই থাক বাংলাদেশে বজ্রপাতের হার বেড়ে গিয়ে যে মৃত্যুর সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে তা রোধে কোন ব্যবস্থা নেই। সচেতনতাও গড়ে তোলা হয়নি।

প্রকৃতিতে কার্বন ডাই অক্সাইউ নি:স্বরন ক্রমাগতভাবেই বেড়ে চলছে বিধায় বৈশ্বিক উষ্মতা বৃদ্ধির কারনে মেঘে মেঘে সংঘর্ষ বজ্রপাতকে ত্বরান্বিত করছে। আবার বিভিন্ন গবেষক বিজ্ঞানীরা বলছেন বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার সংগে বায়ু মন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি সর্ম্পক রয়েছে যা প্রমাণিত এবং প্রকৃতির এক ভয়াবহ পরিনাম যে বজ্রপাতে কয়েক মিলি সেকেন্ডে তাপমাত্রা সূর্য পৃষ্টের তাপমাত্রার কাছাকাছি চলে যায়। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে বিগত কয়েক বছরে ঢাকার বাতাসে কার্বনের পরিমান ৪% এর বেশি বেড়েছে এবং বাতাসে ধূলিকনার মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ২০০ মাইক্রোগ্রামের মনে করা হলেও এলাকা ভেদে প্রতি ঘনমিটারে ৬৬৫ থেকে ২০০০ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে। তাহলে শহরে দেশের সবচাইতে বজ্রপাত প্রবন এলাকা হওয়ার কথা থাকলেও তা বৈদ্যুতিক তারের বেরাজালের কারনে বুঝা যায় না সত্যি কিন্তু বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রপাতি যেমন বাল্ব, রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, ওভেন, এয়ারকুলার ইত্যাদি মূলধন যন্ত্রপাতির ক্ষতি সাধন হয়ে থাকে। এই ক্ষতি আবার সাধারন ভোক্তাদের মেরামত খরচ বাড়িয়ে তোলে যা তাদের সাংসারিক বাজেট বহির্ভূত।

একজন আবহাওয়াবিদ জানান, গ্রীষ্ম মৌসুম বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ অতিক্রম করে পরবর্তী মৌসুমগুলোতে শীতের আগে পর্যন্ত তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গেই গরম বাতাসে জলীয়বাষ্প উর্ধমুখী হয়ে মেঘের ভেতরে যায়। এই জলীয়বাস্প যত বেশি হবে মেঘের উষ্ণায়ন ক্ষমতাও অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়ে জ্যামিতিক হারে মেঘের সৃষ্টি হবে। বাতাসের এই প্রক্রিয়া উপর ও নিচে দুইভাবে চলতে থাকে। আপ ড্রাফ হলো মেঘের উপরের স্তর এবং ড্রাউন ড্রাফ মেঘের মধ্যম ও নিচের স্তর। এই মেঘই বজ্রমেঘ। এই দুই মেঘের মধ্যে বৈদ্যুতিক পজিটিভ ও নেগেটিভ বিকিরণে প্রাকৃতিক নিয়মে ব্যালান্স (ভারসাম্য) আনার চেষ্টা হয়। পজিটিভ ও নেগেটিভ মেঘ একত্রিত হয়ে বিদ্যুত সঞ্চালন শুরু হলে বজ্রপাত হতে থাকে। এই বিদ্যুত সঞ্চালনে বাতাসের তাপমাত্রা ২০ থেকে ৩০ হাজার ডিগ্রী সেলসিয়াসে পরিণত হয়। মেঘের অভ্যন্তরের নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাস সম্প্রসারিত হয়ে ভয়াবহ কম্পনে গর্জে ওঠে মেঘ। শব্দের গতিবেগের চেয়ে আলোর গতিবেগ বেশি হওয়ায় আলোর ঝলক আগে দৃষ্টিতে আসে। পরে প্রচন্ড শব্দ অনুভূত হয়। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে প্রতি বছর গড়ে ৩০০ জনের মৃত্যু হয় বজ্রাঘাতে। ১৯৯০ থেকে ২০৩ সাল পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৬০৪ জনের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ আড়াই হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছে ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বজ্রপাতের শিকার মানুষের বড় অংশই কৃষক, যারা সবার মুখে অন্ন তুলে দিতে মাঠে যান। সেখানেই মরে পড়ে থাকেন। গত ২২ এপ্রিলও (২০২৩) ধান কাটতে গিয়ে বজ্রাঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনার আট কৃষক। চিরবিদায়ের এত এত করুণ গল্প, এত মৃত্যুর পরও বিষয়টি খুব একটা দৃষ্টি কাড়তে পারছে না ঊর্ধ্বতন মহলের। এ উপেক্ষার কারণ হয়তো বজ্রপাতে সাধারণ মানুষের মৃত্যু। কোনো পর্যায়ের নীতিনির্ধারকরা যেহেতু এর শিকারে পরিণত হন না, তাই এটা নিয়ে তোড়জোড়ও কম। জগন্নাথপুরের বৃদ্ধ কৃষক মুজিবুর রহমান এর মতে, আগেও বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু হতো কিন্তু তা এখনকার তুলনায় অনেক কম। তার মতে, আগে আকাশে মেঘ দেখে বোঝা যেত যে ঝড়-বৃষ্টি আসছে এবং গ্রামের মাঠেঘাটে কাজ করা কৃষক বাড়ি ফিরে যেতেন, এখন তা বুঝতে পারলেও বাড়ি যাওয়ার সময়টুকুও তারা পান না, তার আগেই অকস্মাৎ শুরু হয়ে যায় ঝড়-বৃষ্টি-বজ্রপাত। তাই যে যেখানে থাকেন সেখানেই কোনো বড় গাছ বা অন্য কিছুর নিচে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করেন। যেখানে এর কিছুই থাকে না, তারাই মূলত বজ্রবিদ্যুতের শিকার হন।

বাংলদেশের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, পাবনা, নঁওগা, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, জামালপুর, গাইবান্ধা ও টাঙ্গাইল সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতপ্রবণ জেলা। ফলে এ ১৫ জেলায় মৃত্যুও বেশি, এর মধ্যে মার্চ-এপ্রিল ও মে মাসে বজ্রপাত বেশি হয় হাওরাঞ্চলের কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনা জেলায়, জুন, জুলাই, আগস্টে হয়ে থাকে সুনামগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও বরিশালে, অন্যদিকে কুড়িগ্রাম ও পঞ্চগড়েও বজ্রপাত বেশি হয়, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয়। শহরের চেয়ে গ্রামীণ এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর হার অনেক বেশি, বিশেষ করে ফাঁকা মাঠে চাষের কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হচ্ছে অনেকের। এর অন্যতম কারণ হিসেবে কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার করা উন্নত যন্ত্রপাতিকে দায়ী করছেন পরিবেশবিদরা। কেননা এসব যন্ত্রে আকর্ষিত হয় বিদ্যুৎ, সেই সঙ্গে ফাঁকা মাঠে কোনো উঁচু জায়গা বা গাছ না থাকায় মানুষের ওপর বজ্রপাতের ঘটনা অনেক বেশি হচ্ছে, একেকটি বজ্রপাতের সময় প্রায় ৬০০ মেগা ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, যেখানে একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য মাত্র ১০০ ভোল্ট বিদ্যুৎই যথেষ্ট।

বজ্রপাতের ঘটনা সকলের জন্য আগাম সতর্ক বার্তা বলে মনে হয়। তাই বজ্রপাতের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করা যাবে না, বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে যেতে হবে, যেহেতু বৈদ্যুতিক শকের চেয়ে বেশি শক্তিসম্পন্ন বজ্রপাত শক, সেহেতু বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে, হাসপাতালে নিতে হবে, বজ্র আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, এছাড়া বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকানোর জন্য উঁচু তালগাছই সবচেয়ে কার্যকর যা বাড়ীর আঙ্গীনায় লাগাতে হবে, বজ্রপাত সতর্কতা বিষয়ে সব জানতে হবে, সতর্কতামূলক কাজগুলো যথাযথভাবে নিজে পালন করতে হবে এবং অন্যকেও নিয়ম পালনে সাহায্য করতে হবে। দেশের বজ্রপাত প্রবন এলাকাগুলো সনাক্ত করতে হবে আবহাওয়া জরীপের ভিত্তিতে। গত কয়েক বছরে প্রায় চার হাজার নারী পুরুষ বজ্রপাতের কারনে আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরন করেছে, তাদের বেঁচে থাকার জন্য ক্ষতিপূরনের পাশাপাশি সু-চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে হবে। উৎ্কণ্ঠার বিষয় হলো, বাংলাদেশে এত বেশি মৃত্যুহার হলেও বজ্রপাত নিয়ে কোনো গবেষণা ও তা থেকে মৃত্যুরোধের কোনো কার্যক্রম নেই। সীমিত পরিসরে বজ্রপাত সম্পর্কে শুধু পুস্তিকা এবং সেমিনারের মাধ্যমে সরকারি কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে। সচেতনতার অভাব, বজ্রনিরোধক এবং উল্ল্যেখযোগ্য সরকারি কোনো কার্যক্রম না থাকায় প্রতি বছর এতগুলো প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। বজ্রপাতের কারণে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, যেহেতু বজ্রপাত প্রতিরোধের কোনো উপায় বের হয়নি সেহেতু বজ্রপাতের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। একই সঙ্গে গবেষণা সম্প্রসারণের জন্য গবেষকদের অনুপ্রাণিত করতে হবে যাতে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে বজ্রপাতের তীব্রতা, নিখুঁত সময় ও আরো নতুন তথ্য জানা যায়। মানুষ ও সরকার দুজনকেই নিরন্তর সমভাবে এগিয়ে যেতে হবে মুক্ত পরিবেশ গড়ার লক্ষ্যে।

আজকের নলজুর/১১জুন২৪/বিডিএন

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরণের আরো খবর
© All rights reserved © 2023 আজকের নলজুর
Design and developed By: Syl Service BD