জগন্নাথপুর প্রতিনিধি:-

উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাধক কবি রাধারমন দত্ত পুরকায়স্থ এর ১০৯ তম তিরোধান তিথি স্মরণে শ্রীশ্রী রাধারমন স্মৃতি সংঘের আয়োজনে অষ্ট প্রহর ব্যাপী রাধা গোবিন্দের নাম ও লীলা সংকীর্ত্তন মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কারে দেখাবো মনের দুঃখ গো বুক চিরিয়া, অন্তরে তুষেরি অনল জ্বলে গইয়া গইয়া,, এরকম কয়েক হাজার গানের রচয়িতা রাধারমন দত্ত পুরকায়স্থ এর জন্ম মাটি জগন্নাথপুর উপজেলার জগন্নাথপুর পৌর শহরের কেশবপুর এলাকায় সমাধিস্তলে প্রতি বছরের মতো এবারও ১০৯ তম তীরোধান তিথি স্মরণে অষ্ট প্রহর ব্যাপী রাধা গোবিন্দের নাম ও লীলা সংকীর্ত্তন মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

জগন্নাথপুর পৌর শহরের কেশবপুর এলাকায় রাধারমন সমাধি মন্দির প্রাঙ্গণে শ্রীশ্রী রাধারমন স্মৃতি সংঘের আয়োজনে গত সোমবার থেকে শুরু হয়ে বুধবার পর্যন্ত তিনদিন ব্যাপী এই মহোৎসব শত শত ভক্তবৃন্দের পাশাপাশি শুভানুধ্যায়ীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়।

ভক্তবৃন্দের পদচারনায় মুখরিত সমাধি মন্দির প্রাঙ্গণে উতসব আমেজের সৃষ্টি হয়। যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেলেও সমাধি মন্দির প্রাঙ্গণে স্বল্প এই স্হানে লোকে লোকারণ্য থাকায় গাদাগাদি স্হানে অনুষ্ঠান আয়োজকদের বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে পরতে হয়।

শ্রীশ্রী রাধারমণ স্মৃতি সংঘের উপদেষ্টা স্বপন বৈদ্য বলেন- জায়গার সংকীর্ণতার কারণে অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে আমরা উপস্থাপনা করতে পারিনা, যে পরিমাণ ভক্তের সমাগম ঘটে, সে পরিমাণ ভক্তের জায়গা দিতে পারি না, শ্রী শ্রী রাধারমণের সমাধি ছাড়া আমাদের আর কোন জায়গা নেই, আমরা অনুষ্ঠান করি একজনের জায়গায় আর প্রসাদ বিতরণ করি অন্যজনের আঙ্গিনায়। তিনি আরো বলেন- শুনেছি রাধারমণ দত্ত জমিদার বংশীয় ছিলেন, শ্রী শ্রী রাধারমণ দত্তের স্মৃতি ধরে রাখতে একটু জায়গার কারণে এই অনুষ্ঠান করতে কষ্ট হয়, এটা খুব দুঃখজনক। তাই আমরা নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের প্রতি আকুল আবেদন করবো যাতে রাধারমণের সমাধি মন্দিরের পাশে মন্দিরের নামে একটু জায়গা দেয়া হয়।

উপদেষ্টা নন্দ লাল দাস বলেন- শ্রী শ্রী রাধারমনের এই অনুষ্ঠানে ভক্তবৃন্দের যে চরমধূলি পেয়েছি, আমরা গর্বিত আমরা আনন্দিত, এভাবে ভক্তবৃন্দের চরণধূলি যেন প্রতিবছর আমরা পাই।

স্মৃতি সংঘের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি আকল মালাকার বলেন-দেশ বিদেশ থেকে ছুটে আসা ভক্তবৃন্দ স্বাচ্ছন্দ্যে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন। এজন্য সরকারের কাছে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান। তিনি আরো বলেন রাধারমণ ১০৯তম তিরোধান উৎসব আজকে সমাপনী হতে যাচ্ছে, সবাই আশীর্বাদ করবেন আমরা যেন আগামী বছর আরো ভালো করে অনুষ্ঠান করতে পারি।

১০৯ তম তিরোধান তিথি স্মরণে অষ্ট প্রহর ব্যাপী মহোৎসব পরিচালনায় ছিলেন- কুলাউড়া উপজেলার শ্রী দীপেন্দ্র গোস্বামী।

অনুষ্ঠানের প্রথম দিন সোমবার শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ করেন সুশীল বৈদ্য ও স্হানীয় ভক্তবৃন্দ, বিশেষ বক্তা ছিলেন শ্রী চৈতন্য দাস উমা,শুভ মঙ্গলঘট স্হাপন, শুভ অধিবাস কির্ত্তন পরিবেশনায় ছিলেন নিবারন সূত্রধর, পরিচালনায় ছিলেন আশীষ চন্দ্র দেব।

দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার ব্রাহ্মমূহুর্ত হতে অষ্ট প্রহর ব্যাপী শ্রীশ্রী রাধা গোবিন্দের নাম ও লীলা সংকীর্ত্তন অনুষ্ঠানে নামামৃত সুধা পরিবেশনায় ছিলেন রাধারমন স্মৃতি সংঘের সৌজন্যে শান্তিগঞ্জ উপজেলার শ্রীশ্রী নিবারন সূত্রধর দামাদোর সম্প্রদায়,নিকেশ দেবনাথ এর সৌজন্যে গোলাপগঞ্জ উপজেলার, শ্রীশ্রী কালাচাঁদ সেবক সংঘ, বীরেন্দ্র বৈদ্য এর সৌজন্যে বালাগঞ্জ উপজেলার লোহামুরার সুমন বৈদ্য এর রাধা সুদর্শন যুব সংঘ, এবং বিজয় বৈদ্য এর সৌজন্যে ছাতক উপজেলার ছৈলার দীপ্ত বৈদ্য এর রাধামাদব সম্প্রদায়।

কেশবপুর এলাকার স্বর্গীয় নান্টু মালাকার ও স্বর্গীয় মায়া রানী মালাকার এর উতসর্গে ইতালি প্রবাসী বাবুল মালাকার এর সৌজন্যে দুপুর ২ টায় আনন্দ বাজারে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিন বুধবার শান্তিগঞ্জ উপজেলার শ্রীযুক্ত নিবারন সূত্রধরের পরিবেশনায় দধিভান্ড ভঞ্জন ও পূর্ণা অনুষ্ঠিত হয়।

রাধারমন স্মৃতি সংঘের সদস্য ইতালী প্রবাসী বাবুল মালাকার, বিকাশ বৈদ্য, নিপেশ দেবনাথ, সুমন বৈদ্য, বানু চন্দ্র, উজ্জ্বল বৈদ্য ও দুবাই প্রবাসী গৌরাঙ্গ মালাকার এর সার্বিক সহযোগিতায় এবং রাধারমন স্মৃতি সংঘের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি আকল মালাকার এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বিজয় বৈদ্য এর পরিচালনায় অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন রাধারমন স্মৃতি সংঘের উপদেষ্টা

বিরেন দেব নাথ, মানিক লালা দেব, দিরু সরকার,শংকর দাস, অরজিত মালাকার, সুধীর বৈদ্য, দীরেন্দ্র বৈদ্য, সুশীল বৈদ্য, আশিষ চন্দ্র দেব, রুনু মালাকার, সঞ্জু দাস, ধীরেন্দ্র দেবনাথ,মিন্টু মালাকার,নন্দ লাল দাস,নিতাই দেব, স্বপন বৈদ্য, সন্তোষ দাস, নিকাশ সরকার,জিতেন্দ্র সরকার,রনজিত ধর,সিন্ধু মালাকার,অরুন মালাকার সহ রাধারমন স্মৃতি সংঘের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য লিটন দাশ, সিপন দাশ, নিকলেস দেব নাথ, মূদুল দেব, বিজন দেব নাথ, সাগর দেব, গোবিন্দ মালাকার, নিত্যানন্দ মালাকার, সোকেস বেদ্য, বাদল সিল, বিপুল বৈদ্য, রিমন কর,অন্তর সরকার,দীপক সরকার, জীবন সরকার সহ সকল নেতৃবৃন্দ এবং সদস্য বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আজকের নলজুর/২৯নভেম্বর২৪/বিডিএন